বারবার প্রচার, তবু নাবালিকা বিয়ে চলছেই

গ্রামে গিয়ে বাধা পেল চাইল্ড লাইন

বিয়ের তিন দিন বাকি। বাড়ি ভর্তি আত্মীয়-স্বজন। ম্যারাপ বাঁধাও শেষ। হঠাৎ হাজির পুলিশ, প্রশাসনের লোকজন। পাত্রী যে নাবালিকা! কনের বয়সের শংসাপত্র দেখতে চাওয়া মাত্র ভিড় জমে যায়। আত্মীয়-স্বজন, পড়শিদের জড়ো করে মেয়ের মা জানান, কোনও রকমে বিয়ের জোগাড় করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৭ ০০:৪৩
Share:

বিয়ের তিন দিন বাকি। বাড়ি ভর্তি আত্মীয়-স্বজন। ম্যারাপ বাঁধাও শেষ। হঠাৎ হাজির পুলিশ, প্রশাসনের লোকজন। পাত্রী যে নাবালিকা!

Advertisement

কনের বয়সের শংসাপত্র দেখতে চাওয়া মাত্র ভিড় জমে যায়। আত্মীয়-স্বজন, পড়শিদের জড়ো করে মেয়ের মা জানান, কোনও রকমে বিয়ের জোগাড় করেছেন। তা ভেঙে মুচলেকা দেওয়া সম্ভব নয়। সুর মেলান মঙ্গলকোটের নতুনগ্রামের তৃণমূল পঞ্চায়েতের সদস্যও। অভিযোগ, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয় চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধিদের। মেয়েটির সঙ্গে কথাও বলতে দেওয়া হয়নি। পরে জেলা শিশু কল্যাণ সমিতি ও কাটোয়ার মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানান চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধিরা।

চাইল্ড লাইন সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার চাইল্ড লাইনের হেল্পলাইন নম্বরে ক্ষীরগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ফোন করে জোর করে তার বান্ধবীর বিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানায়। ঠিকানাও দেয়। তার ভিত্তিতেই মঙ্গলবার দুপুরে কৈচর ফাঁড়ির জনা চারেক পুলিশকর্মীর সহায়তায় চাইল্ড লাইন ও জেলা শিশু কল্যাণ দফতরের জনা দুয়েক প্রতিনিধি হানা দেন নতুনগ্রামের ওই নাবালিকার বাড়িতে। তবে আধিকারিকদের দেখেই বেঁকে বসে একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর পরিবার। তাঁরা জানিয়ে দেন, তিন দিন বাকি, খুব কষ্ট করে বিয়ের জোগাড় করা হয়েছে। ভেস্তে গেলে আতান্তরে পড়ে যাবেন তাঁরা। চাইল্ড লাইনের কাটোয়ার আধিকারিক অরূপ সাহা বলেন, প্রথমেই পাত্রীর মা বেরিয়ে এসে বলেন কোনও বিয়ে হচ্ছে না। অথচ প্যান্ডেল বাঁধা রয়েছে দেখে বুঝত পারি উনি বিষয়টি আড়াল করতে চাইছেন। এরপর বাড়ির ছবি তুলতে গেলে আমার ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ডেকে নিয়ে আসে পঞ্চায়েত সদস্য দীনু মাঝিকেও।’’ তাঁদের দাবি, নাবালিকা বিয়ে যে আইনবিরুদ্ধ তা বুঝতে চাননি ওই পঞ্চায়েত সদস্যও। উল্টে কোনও ঝামেলা না করে চলে যেতে বলেন। ওই পরিবারের তরফে মেয়েটির শারীরিক সমস্যা রয়েছে তাই চিকিৎসক তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে বলেছেন বলেও দাবি করা হয়। যদিও কী রোগ, কোন চিকিৎসক সে সব কিছুই বলতে চাননি তাঁরা। এমনকী বারবার বলার পরেও মেয়েটিকে ডাকা হয়নি। চাইল্ড লাইনের দাবি, কমবয়সে বিয়ে হয়ে গেলে মনে ও শরীরে কী প্রভাব পড়ে, তা বারবার বোঝানোর পরে বিয়ে বন্ধ রাখবেন বলে জানান তাঁরা। কিন্তু মুচলেকা দিতে রাজি হননি। ওই পঞ্চায়েত সদস্যের সহায়তায় নাবালিকার বাবা জোর করে তাঁদের বের করে দেন বলেও দাবি অরূপবাবুর।

Advertisement

পরে যদিও ওই সদস্য বলেন, ‘‘গরিব পরিবারটিকে মুশকিলে ফেলতে চাইনি। তবে এখন বিষয়টির গভীরতা বুঝে ওদের বুঝিয়েছি।’’ কৈচর ১ পঞ্চায়েত প্রধান বিশ্বজিৎ দে-ও বলেন, ‘‘ওই পরিবারটির সঙ্গে কথা বলে মেয়েটির বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।’’ মহকুমাশাসক খুরশিদ আলু কাদরি জানান, মেয়েটি যাতে নিয়মিত স্কুলে যায় তা দেখতে বলা হয়েছে।

প্রচার স্বত্ত্বেও এই হাল কেন? ক্ষীরগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রেমানন্দ ঘোষের আক্ষেপ, ‘‘মাস ছয়েক আগে বাল্যবিবাহ বন্ধের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের নিয়ে স্কুলে প্রচার চালায় চাইল্ড লাইন। অথচ আমারই স্কুলের এক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে!’’ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সৌমেন শাসমল জানান, ১৬ বছর পর্যন্ত শরীরের বৃদ্ধি হয়। এ সময় বিয়ে হলে বা সন্তান হলে সে দুর্বল হয়। গর্ভধারণে নানা সমস্যাও হতে পারে। মনোবিদ সাগর বন্দোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এ বয়সে বিয়ে অনেক সময়ে বিষণ্ণতা ডাকে। আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন