পুলিশ ফাইল

ছিন্নভিন্ন দেহ, জামায় ‘এন’ দেখে শনাক্ত

প্রায় সতেরো দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন যুবক। খোঁজ চলছিল আশপাশের এলাকায়। হঠাৎই এক দিন ছিন্নভিন্ন একটি মৃতদেহ খুঁজে পায় পুলিশ। জঙ্গলে মেলা সেই দেহ দেখে শনাক্ত করার উপায় বিশেষ ছিল না। তবে জামায় ‘এন’ লেখা দেখেই পরিবারের লোকজন চিনতে পারেন ছেলেকে।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭ ০০:৪১
Share:

নিহত: বিজেপি নেতা নগেন্দ্র গিরি। ফাইল চিত্র

প্রায় সতেরো দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন যুবক। খোঁজ চলছিল আশপাশের এলাকায়। হঠাৎই এক দিন ছিন্নভিন্ন একটি মৃতদেহ খুঁজে পায় পুলিশ। জঙ্গলে মেলা সেই দেহ দেখে শনাক্ত করার উপায় বিশেষ ছিল না। তবে জামায় ‘এন’ লেখা দেখেই পরিবারের লোকজন চিনতে পারেন ছেলেকে।

Advertisement

রানিগঞ্জের জেকেনগর কলোনির মহাবীরস্থানের বিজেপি নেতা নগেন্দ্র গিরির (৩৫) অভ্যেস ছিল, নিজের জামাকাপড়ে নামের আদ্যক্ষর ‘এন’ লিখে রাখা। ১৯৯৪ সালের ২ নভেম্বর নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। ১৯ নভেম্বর নিঘায় পরিত্যক্ত বিমানবন্দরের পাশে জঙ্গলে মাথার খুলি, হাত, পা-সহ দেহের নানা অংশ আলাদা ভাবে উদ্ধার হয়। মেলে জামাকাপড়, আংটিও। বাইশ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি এই খুনের মামলার।

জেকেনগর বাজারে পারিবারিক ব্যবসা ছিল নগেন্দ্রদের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দেহ উদ্ধারের পরে নগেন্দ্রর কাকা বীরবাহাদুর গিরি আশপাশের এলাকার বাসিন্দা গোরেলাল পাসোয়ান ও কিশোরী পাসোয়ানের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। সপ্তাহখানেক পরে অভিযুক্ত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতের নির্দেশে ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করে ঘটনায় অভিযুক্ত আরও ১১ জনের নাম মেলে বলে পুলিশের দাবি। একে-একে তাদেরও গ্রেফতার করা হয়। ধৃতেরা সবাই পরে জামিনে ছাড়া পেয়েছে। ১৯৯৭ সালের ২৬ জুলাই পুলিশ আদালতে এই মামলার চার্জশিট জমা দেয়। ১৩ জনকেই সেখানে খুনে অভিযুক্ত করা হয়। তবে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব এখনও শুরু হয়নি। এর মধ্যে এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: লিফ্‌ট বিকল, রোগীরাও সিঁড়ি ভাঙছেন

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, নগেন্দ্র বিজেপি-র নেতা ছিলেন। তবে খুনের পিছনে রাজনৈতিক কারণ ছিল না বলেই তাঁদের অনুমান। টাকা-পয়সা নিয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে বিবাদের জেরেই তাঁকে খুন হতে হয় বলে ধারণা এলাকার অনেকের। ওই এলাকারই বাসিন্দা তথা আসানসোল বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সদস্য সায়ন্তন মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, মামলার অগ্রগতি না হওয়ার জন্য পুলিশের গড়িমসিও দায়ী। যদিও পুলিশ কোনও গড়িমসির কথা মানতে চায়নি।

জেকেনগরে নগেন্দ্রর পরিবার ঘটনার এত বছর পরেও আতঙ্কে রয়েছেন। নিহতের ভাই অমরেন্দ্র গিরি জানান, তাঁদের ছ’ভাইয়ের মধ্যে বড় নগেন্দ্র খুন হন। আর এক ভাইয়ের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। তার পরে এক ভাই বাড়ি ছেড়ে চলে যান। অমরেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘আমরা বাকি তিন ভাই এখনও দুষ্কৃতীদের রোষে পড়ার ভয়ে থাকি।’’ তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তেরা এখন ওই এলাকায় থাকেন না।

বিজেপি-র আসানসোল জেলা সভাপতি তাপস রায় বলেন, ‘‘দু’দশক কেটে যাওয়ার পরেও বিচার পায়নি আমাদের দলের নিহত নেতার পরিবার। যত দ্রুত সম্ভব বিচার শেষ করে দোষীদের সাজা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন