বরাকর-ডিসেরগড় রোডে ভেঙে পড়েছে বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
একটু ভারী বৃষ্টি হলে এলাকা জলমগ্ন হয় প্রতি বছরই। তবু নজর দেওয়া হয় না নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়নে। দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে শনিবার ফের জলমগ্ন হয়ে পড়েছে খনি-শিল্পাঞ্চলের নানা এলাকা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনের কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। প্রশাসনের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আসানসোলের রেলপাড় এলাকা প্রতি বর্ষায় জলমগ্ন হয়। গারুই নদী স্ফীত হয়ে রেলপাড়ের দু’কূলে জল উপচে পড়ে। এ বারও একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে কয়েক দিন আগে নদী সামান্য সংস্কার হওয়ায় খানিক সুবিধা হয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় টানা বৃষ্টিতে জল দাঁড়িয়েছে কসাই মহল্লা, মুতসুদ্দি মহল্লা, হাজিনগর ইত্যাদি এলাকায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিকাশির দিকে আরও নজর দিলে এই পরিস্থিতি হত না। আসানসোলের তিনটি রেল টানেলেও জল দাঁড়িয়েছে।
কুলটির ২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রিয়া কলোনি এলাকায় জল জমেছে কয়েক ফুট উচ্চতায়। বাড়িতে-বাড়িতে ঢুকে গিয়েছে সেই জল। বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার থেকেই এই পরিস্থিতি। স্থানীয় বাসিন্দা সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘১৭ বছর ধরে রয়েছি এখানে। প্রতি বর্ষায় এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। প্রশাসন থেকে পুরসভা সবার কাছে অনেক আবেদন করেও লাভ হয়নি।’’ কুলটি পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ষার সময়ে আশপাশের আটটি অঞ্চলের জল এখান দিয়ে বয়ে যায়। এলাকায় কোনও বড় নর্দমা নেই। একটি মাঝারি মাপের নর্দমা, তা-ও সাফাই হয় না। ফলে, জলের তোড়ে নর্দমা ছাপিয়ে গোটা অঞ্চল ভেসে যায়। এ বার পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর বলে দাবি করেছেন বাসিন্দারা। ১৬৭টি পরিবার অথৈ জলে পড়েছে।
ওই কলোনির পাশেই রয়েছে কুলতড়া বহাল অঞ্চল। সেখানেও পরিস্থিতি বেশ খারাপ। এলাকার প্রায় ৫০টি বাড়িতেই জল ঢুকে গিয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র বিশ্বরূপ ঘোষ জানায়, জলবন্দি হওয়ায় তিন দিন ধরে স্কুলে যেতে পারছে না। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসন বা পুরসভার তরফে কেউ এলাকায় খোঁজ নিতে আসেনি। কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস অবশ্য শনিবার বলেন, ‘‘আমি পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছি, ওই এলাকায় লোক পাঠিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
বরাকরের হিউম পাইপ কলোনি এলাকায় মাঠের উপর দিয়ে জল ও আবর্জনা বয়ে চলেছে। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ মাজিলের অভিযোগ, ‘‘আমাদের এখানে নিকাশি ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। তাই বর্ষার সময়ে আমরা কার্যত জলের তলায় চলে যাই।’’ তাঁদের অভিযোগ, পুরসভার কাছে বহু বার তাঁরা নিকাশির উন্নতির জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। বারাকরের চুনগাড়ি, মাজিপুকুর এলাকাতেও প্রায় একই চিত্র। বরাকর-ডিসেরগড় রোডে একটি পুরনো তিনতলা বাড়ি শনিবার ভেঙে পড়েছে। বাসিন্দারা সময় মতো বেরিয়ে আসায় কেউ হতাহত হননি।
সালানপুরে পশ্চিম রাঙামাটিয়ার এক নম্বর এলাকায় সুকান্তপল্লির নিচু অংশে জল জমেছে। কয়েকটি বাড়িতে রূপনারায়পুর জোড়ের জল ঢুকে গিয়েছে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, এলাকায় একটি নর্দমা তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা হয়নি। বড় নর্দমা না থাকার জন্যই জল জমছে বলে দাবি তাঁদের। মহকুমাশাসক অমিতাভবাবু জানান, বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে কাজে নামানো হবে।
দুর্গাপুরের লাউদোহায় টুমনি নদীর জল বাড়ায় আমদহি, কৈলাসপুর, জগন্নাথপুরের মতো নানা এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। লাউদোহার লস্করবাঁধ, নতুনডাঙা এলাকায় কিছু মাটির বাড়ির দেওয়াল ধসে পড়েছে।