আদালতে কাজ বন্ধ, অভিযুক্ত সিন্ডিকেট

ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বার্তা দিয়েছেন, সিন্ডিকেট করা চলবে না। কিন্তু সেই নির্দেশে যে তেমন কাজ হয়নি, রাজারহাট-নিউটাউন থেকে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে একের পর এক ঘটনাই তার প্রমাণ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:১৪
Share:

থমকে নতুন ভবনের কাজ। নিজস্ব চিত্র।

ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বার্তা দিয়েছেন, সিন্ডিকেট করা চলবে না। কিন্তু সেই নির্দেশে যে তেমন কাজ হয়নি, রাজারহাট-নিউটাউন থেকে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে একের পর এক ঘটনাই তার প্রমাণ। সিন্ডিকেটের জুলুমে ফের কাজ বন্ধের অভিযোগ উঠল আসানসোলে। তাদের কাছেই নির্মাণ সামগ্রী কিনতে হবে, কয়েক জনের এমন হুমকিতে আদালতের নতুন ভবন তৈরির কাজ দু’দিন ধরে বন্ধ রেখেছে ঠিকাদার সংস্থা।

Advertisement

ওই ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার সুপ্রিয় চট্টোপাধ্যায় পূর্ত দফতরের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। আসানসোলের পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষয়টি তারা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (আসানসোল) সুমিত গুপ্ত বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। তবে চিন্তার কিছু নেই। সমস্যা মিটিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।’’ রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, ‘‘এরকম কোনও অভিযোগ আমার জানা নেই।’’

গত সেপ্টেম্বরে আসানসোলে নতুন এই আদালত ভবনটি তৈরির বরাত পায় ঠিকাদার সংস্থাটি। কাজ শুরু হয় অক্টোবরে। এক বছরের মধ্যে তা শেষ হওয়ার কথা। খরচ ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ন’কোটি টাকা। ঠিকাদার সংস্থা সুত্রে জানা গিয়েছে, দ্রুত গতিতেই কাজ চলছিল। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় সোমবার বিকেল থেকে। অভিযোগ, সে দিন পাঁচটি মোটরবাইকে চড়ে নির্মীয়মাণ ভবনে এসে হাজির হয় কিছু লোকজন। শ্রমিক-কর্মীদের তারা সাফ জানায়, কাজ করতে হলে নির্মাণ সামগ্রী নিতে হবে তাদের কাছ থেকেই। না হলে এখানে কাজ করা যাবে না, এই হুমকি দিয়ে সে দিন ফিরে যায় তারা। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকেরা কাজ শুরু করতে যেতেই ওই সব লোকজন ফের হাজির হয়ে ধমক দেয়। ভয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে ঠিকাদার সংস্থার আধিকারিক-কর্মীরা জানান। বুধবারও কাজ শুরু হয়নি।

Advertisement

ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার সুপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘আমার কর্মীরা কেউ ভয়ে কাজে নামতে চাইছেন না। আমি বিষয়টি পূর্ত দফতরকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।’’ যারা হুমকি দিয়েছে তাদের পরিচয় সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে না চাইলেও ঠিকাদার সংস্থার এক কর্মীর অভিযোগ, ‘‘ওরা এলাকায় তৃণমূলের কর্মী বলে পরিচিত। এলাকায় নির্মাণের জিনিসপত্র সরবরাহের সিন্ডিকেট রয়েছে বলে দাবি করেছে ওরা ওদের। তাই ওদের থেকেই সমস্ত কিনতে হবে বলে হুমকি দিয়েছে।’’ ঠিকাদার সংস্থার কর্মীদের দাবি, তাঁরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, ওই সিন্ডিকেটের জিনিসের মান মোটেই ভাল নয়। দামও বেশ চড়া।

সুপ্রিয়বাবুর দাবি, এ ভাবে বাধা এলে সময়ে কাজ শেষ করা যাবে কি না, সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আসানসোল পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ভজন সরকার অবশ্য বলেন, ‘‘সমস্যার কথা আমি শুনেছি। বিশদে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছে আবেদন করেছি।’’ পুলিশের কাছে অবশ্য কোনও লিখিত অভিয়োগ করা হয়নি বলে জানান তিনি। তাঁর দাবি, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে খবর দেওয়া হয়েছে। তাই বৃহস্পতিবারই সমস্যা মিটিয়ে কাজ শুরু করে ফেলার ব্যাপারে বলে তাঁরা আশাবাদী। অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমিতবাবু অবশ্য জানান, পূর্ত দফতর থেকে কোনও চিঠি বুধবার তাঁরা না পেলেও ঘটনার কথা জেনেছেন।

রাজ্যের মন্ত্রী তথা ওই এলাকার বিধায়ক মলয় ঘটকের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। জবাব দেননি এসএমএসেরও। তবে ঘটনার পিছনে তৃণমূলের লোকজনের জড়িত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন দলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের কেউ এর মধ্যে নেই। এই হুমকির বিরুদ্ধে আমরা ঠিকাদারের পাশে থাকব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন