কল্লোল নন্দন। নিজস্ব চিত্র।
রাস্তা থেকে নির্মীয়মাণ বহুতলের নীচে তুলে নিয়ে গিয়ে লাঠি-বাঁশ দিয়ে বিজেপি নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠল বর্ধমানে। সোমবার দুপুরে শহরের গুডস্শেড রোডে ঘটনাটি ঘটে। বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার আহ্বায়ক কল্লোল নন্দনের অভিযোগ, তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের উস্কানিতে মারধর করা হয়েছে তাঁকে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার পরে, তিনি বর্ধমান থানায় অভিযোগ করবেন বলে জানান। পুলিশ জানায়, ঘটনার খবর পেয়েই খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব উস্কানির অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা দাবি করেন, ভোটের সময়ে দলের কর্মীদের মোটা টাকার লোভ দেখিয়েছিলেন ওই বিজেপি নেতা। কথার খেলাপ করায় তারাই মারধর করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ এলাকারই বাসিন্দা কল্লোলবাবু মোটরবাইকের চাকায় হাওয়া দিতে গুডস্শেড রোডে যান। অভিযোগ, সেখানকার একটি ক্লাবের কয়েকজন যুবক তাঁকে ঘিরে ধরে হেনস্থা করে। কথা কাটাকাটি শুরু হলে তাঁকে ক্লাবের ভিতরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা। বাধা পেয়ে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের নীচে নিয়ে গিয়ে তাঁকে মারধর করা হয় বলে কল্লোলবাবুর অভিযোগ। পুলিশ ও স্থানীয় নানা সূত্রের দাবি, কল্লোলবাবুকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময়ে অভিযুক্তেরা তাঁকে তাদের ‘ভাগ’ কোথায়, সে প্রশ্ন করছিলেন।
কল্লোলবাবু অভিযোগ করেন, বহুতলের নীচে নিয়ে গিয়ে বাঁশ দিয়ে তাঁকে মারধর করা হয়। বেশ কিছুক্ষণ পরে তৃণমূলের এক নেতা এসে ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু আর এক নেতা এসে নিষেধ করেন। পরে দু’জনের মধ্যে কথা হলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এমনকি, বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া ও মোটরবাইকটিও বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কল্লোলবাবুর দাবি, ‘জরিমানা’ বাবদ তাঁর কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘যারা আমাকে মেরেছে, তারা বিজেপি করত কি না, আমার জানা নেই। তবে তৃণমূল নেতাদের উস্কানিতেই মারধর করা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ওই এলাকায় বিজেপি করায় ‘ওঠবস’ করানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তাঁর দাবি, “সে সময়েই আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তৃণমূলের ওই নেতারা।’’ পুলিশ জানায়, ঘটনার পরেই এলাকায় টহল দেওয়া শুরু হয়েছে।
বিজেপির জেলা (বর্ধমান সদর) অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সুনীল গুপ্তের অভিযোগ, ‘‘মারধরের কয়েকমিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে তৃণমূল নেতার হাজির হওয়া থেকে পরিষ্কার, কাদের উস্কানিতে এই ঘটনা ঘটেছে।’’ বিজেপির রাঢ়বঙ্গের পর্যবেক্ষক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘গোটা রাজ্যের মতো বর্ধমান শহরেও তৃণমূলের গুন্ডা-রাজ চলছে।’’
ওই এলাকার তৃণমূল নেতা অশোক মণ্ডলের যদিও দাবি, ‘‘টাকাপয়সা নিয়ে গোলমাল শুনলাম। রাস্তায় ভিড় করে বিজেপি কর্মীরা অশান্তি করছেন দেখে আমি সবাইকে সরিয়ে দিই। জানিয়েছি, এখানে অশান্তি করা যাবে না। নিজেদের পার্টি অফিসে গিয়ে যা করার, করতে পারেন।’’ বিধায়ক (বর্ধমান দক্ষিণ) খোকন দাসের অভিযোগ, ‘‘টাকার লোভ দেখিয়ে বিজেপিতে নিয়ে গিয়েছিল অনেককে। যারা টাকা পায়নি, তারাই গোলমাল পাকিয়েছে, শুনলাম। তৃণমূলের কেউ এই ঘটনায় যুক্ত নয়।’’