সরেজমিন: অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গ্রামে বর্ধমান ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
ছিল কেন্দ্রের। হয়ে গেল রাজ্যের। ছিল ইন্দিরা আবাস যোজনার বাড়ি। ‘সংস্কার’-এর পরে তা হয়ে গেল গীতাঞ্জলি প্রকল্পের।
এমনই আজব ঘটনা ঘটেছে বর্ধমানের চান্ডুল গ্রামে। ইন্দিরা আবাসে তৈরি হওয়া বাড়ি সারিয়ে গীতাঞ্জলি প্রকল্পের দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে। যে উপভোক্তার সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে, তিনি বর্ধমান ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রীকে চিঠি লিখেছেন। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্তের পরে অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সমিতির সভানেত্রী ফাল্গুনী দাস রজক।
ঘটনাটা কী?
চান্ডুলের বাসিন্দা, পেশায় মাছ চাষি দয়াময় মিশ্র ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলে ইন্দিরা আবাস যোজনার আওতায় দু’দফায় ৭০ হাজার টাকা বাড়ি করার জন্য পেয়েছিলেন। তিনি ওই টাকায় সরকারের নিয়ম মেনে বাড়িও তৈরি করেন। গত বছর দয়াময়বাবুর নামে মৎস্য দফতর থেকে গীতাঞ্জলি প্রকল্প থেকে বাড়ি তৈরির অনুমোদন হয়। তাঁর অভিযোগ, গত বছর অক্টোবরে মৎস্য দফতরের ওই ঠিকাদার সংস্থার এক জন কর্তা তাঁর কাছে এসে নতুন বাড়ি তৈরির কথা বলেন। তিনি তাঁকে জানান, ইন্দিরা আবাস যোজনার বাড়িটিই তিন বছরের মধ্যে ভেঙে পড়ছে। সারানোর টাকা নেই, সেখানে আবার নতুন বাড়ি। ওই কথা শুনে ঠিকাদার তাঁকে জানান, তিনি পুরনো বাড়ির সংস্কার করে দেবেন। কিন্তু, এ ব্যাপারে কাউকে কিছু জানানোর দরকার নেই।
দয়াময়বাবু বলেন, “ওই ঠিকাদার অনেকের বাড়ি তৈরি করছেন। আমি গরিব মাছ চাষি। সে জন্য দয়াবশত ঘর সংস্কার করে দিচ্ছে বলে ভেবেছিলাম। এ নিয়ে কোথাও মুখ খুলিনি। বাড়ি সংস্কার হওয়ার কয়েক মাস কেটে যাওয়ার পরে গত মাসে এক দুপুরে ওই ঠিকাদার একটি নেমপ্লেট বাড়ির সামনে লাগিয়ে দেন।” দয়াময়বাবু জানান, ওই নেমপ্লেটে বাড়ি প্রাপকের নাম, প্রকল্পের কোড নম্বরের (ডব্লিউবি-৩৯/২৭০/০৭৫০৭৭) সঙ্গে লেখা রয়েছে, ‘গীতাঞ্জলি প্রকল্পের বাড়িটি মৎস্য দফতরের উদ্যোগে তৈরি হল’।
এই নেমপ্লেট দেখেই সন্দেহ জাগে ওই মাছ চাষির। তিনি খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, ইন্দিরা আবাসের পাশাপাশি মৎস্য চাষিদের জন্য গীতাঞ্জলি প্রকল্পেও তাঁর নাম রয়েছে। কিন্তু, জেলা পরিষদ থেকে দরপত্র হওয়ার জন্য স্থানীয় ভাবে তিনি কিছু জানতে পারেনি। তবে কেন্দ্রের প্রকল্প থেকে এক বার বাড়ির জন্য টাকা পাওয়ায় ফের একই কাজে সরকারের টাকা পাওয়া যে যায় না, সে কথা জানতেন দয়াময়বাবু। তাঁর বক্তব্য, “তা হলে আমার বাড়ির নেমপ্লেটে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে তৈরি বাড়ি লেখা হল কী করে? পরে বুঝতে পারি বাড়ি সারানোর নামে সামান্য টাকা খরচ করে আসলে গীতাঞ্জলি থেকে পাওয়া টাকা আত্মসাৎ করেছে ওই ঠিকাদার সংস্থা। তাই পঞ্চায়েত সমিতিতে চিঠি দিয়েছি।” তবে, কোন ঠিকা সংস্থার এই কাজ করেছে, তা এখনও জানা যায়নি। দয়াময়বাবুও নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।
ফাল্গুনীদেবী বলেন, “ওই ঠিকাদার সংস্থাকে চিহ্নিত করে বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা পরিষদকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মৎস্য দফতরকেও আমরা ঘটনাটি জানিয়েছি।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘অভিযোগ গুরুতর। তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’