আঁধারে অঙ্গন/১

ভাঙা ঘরে উনুনে ফুটছে খিচুড়ি, পাশেই পড়ছে খুদেরা

নিজস্ব ভবন নেই। উপযুক্ত পরিবেশ নেই। পুরসভা হোক বা পঞ্চায়েত এলাকা, জেলার বেশিরভাগ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চলছে কোনওমতে। কত রকম সমস্যায় ভুগছে কেন্দ্রগুলি, কী ভাবছে প্রশাসন— খোঁজ নিল আনন্দবাজার। জেলার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে চেনা ছবি এটাই। শিশুদের পড়াশোনা করানো ও পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার লক্ষ্যে শুরু হওয়া এই প্রকল্প ভুগছে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে। বেশিরভাগ কেন্দ্রেরই নিজস্ব ভবন নেই। স্থানীয় ক্লাব বা কারও দেওয়া ঘরে চলছে পড়াশোনা থেকে রান্না-খাওয়া, সবই। জেলা প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য দাবি করেন, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি সাজার কাজ শুরু হয়েছে। বছর খানেকের মধ্যে ভোলবদল হবে কেন্দ্রগুলির।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৮ ০৮:১০
Share:

সালানপুরের এক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। ছবি: পাপন চৌধুরী

একচিলতে একটা ঘর। স্যাঁতস্যাঁতে মেঝে। দেওয়ালের ফাটল বেয়ে বেরিয়ে আসছে পোকামাকড়, পিঁপড়ে। আদুর গায়ে মেঝেতে বসে এক দল শিশু। সামনে বই, ভাঙা স্লেট ও চক। ঘরের এক কোনে কয়লার আঁচে ফুটছে খিচুড়ি। ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১২টা ছুঁতেই শিশুদের থালা-বাটিতে খিচুড়ি তুলে দিলেন রান্নার দিদি। কেউ সেখানেই খেতে বসল। কেউ আবার বাড়ি নিয়ে গেল।

Advertisement

জেলার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে চেনা ছবি এটাই। শিশুদের পড়াশোনা করানো ও পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার লক্ষ্যে শুরু হওয়া এই প্রকল্প ভুগছে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে। বেশিরভাগ কেন্দ্রেরই নিজস্ব ভবন নেই। স্থানীয় ক্লাব বা কারও দেওয়া ঘরে চলছে পড়াশোনা থেকে রান্না-খাওয়া, সবই। জেলা প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য দাবি করেন, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি সাজার কাজ শুরু হয়েছে। বছর খানেকের মধ্যে ভোলবদল হবে কেন্দ্রগুলির।

বারাবনির ইটাপাড়া পঞ্চায়েত কার্যালয় থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রয়েছে বিলা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। বর্ষায় থকথকে কাদা ডিঙিয়ে ঢুকতে হয় সেখানে। জীর্ণ একটি ঘরে জনা কয়েক শিশুকে পড়াচ্ছেন এক মহিলা কর্মী। ঘরের এক কোনে উনুনে খিচুড়ি চাপানো হয়েছে। জানা গেল, গ্রামেরই এক ব্যক্তি এই কেন্দ্র চালানোর জন্য ঘর দিয়েছেন। কর্মীরা পরিকাঠামো নিয়ে কোনও কথা বলতে নারাজ। তবে এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ, বহু বছর ধরে এমনই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে কেন্দ্রটি। অনেক বার এর প্রতিবাদ করেও কোনও লাভ হয়নি বলে তাঁদের দাবি।

Advertisement

সালানপুরের জিতপুর উত্তররামপুর পঞ্চায়েতে মূল রাস্তার উপরেই রামপুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। সেখানেও একচিলতে ঘরে চলছে কেন্দ্রটি। বছর কয়েক আগে পঞ্চায়েতের উদ্যোগেই এই ঘরটি তৈরি হয়েছিল। রাস্তা দিয়ে ছুটছে পাথর বোঝাই ট্রাক। ঘরের মেঝেতে ধুলোর আস্তরণ জমেছে। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, জনা বারো শিশু গাদাগাদি করে মেঝেতে বসে পড়াশোনা করছে। তখনও রান্না চাপেনি। উনুন ধরানোয় ধোঁয়ায় ঢেকেছে ঘর।

আসানসোল পুরসভার ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে ফতেপুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটিরও একই রকম অবস্থা। ঘরের মধ্যে রান্নাবান্নার জন্য কথা বলা মুশকিল। জনা কুড়ি শিশুরও চোখে জল। কেন্দ্রের কর্মীরা জানালেন, এটি আসলে একটি ক্লাবঘর। দিনে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চলে। বর্ষায় ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেতেই বসতে হয় শিশুদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলার নানা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা জানান, বছরের পর বছর এ ভাবেই কাজ চালাতে হচ্ছে তাঁদের। আলাদা রান্নাঘর বা শৌচাগার নেই। উনুনের ধোঁয়ায় শিশুরা শ্বাসকষ্টে ভোগে। অনেক সময়ে খিচুড়ি রান্নার চাল-ডাল এসে পৌঁছয় না। শিশুদের হাতে বিস্কুট দিতে বাড়ি পাঠাতে হয় তখন। একটি কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী মালা মাজি বলেন, ‘‘পুরসভার কর্তারা জানিয়েছেন, খাস জমি পেলেই নিজস্ব ভবন তৈরি করা হবে। কিন্তু কবে জমি মিলবে তা ঠিক নেই।’’ নানা এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, পুরসভা বা পঞ্চায়েতের তত্ত্বাবধানে একটি স্থায়ী মনিটরিং কমিটি গঠন করে এই কেন্দ্রগুলি নিয়মিত দেখভালের ব্যবস্থা করা হোক। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন