এই সব পরিত্যক্ত আবাসনেই আসর বসে বলে অভিযোগ।
মদ, গাঁজা, জুয়ার ঠেকের প্রতিবাদ করায় ফের দুষ্কৃতী-হামলার মুখে পড়ার অভিযোগ উঠল দুর্গাপুরে।
দিন কয়েক আগেই ঠেক চালানোর প্রতিবাদ করতে গেলে এক ব্যক্তিকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল গত বুধবার। সপ্তাহ ঘোরার আগেই ফের একই ধরনের অভিযোগ উঠল এই শহরে। এ বার দুর্গাপুরের সগড়ভাঙায়। সেখানকার বাসিন্দা গৌরচন্দ্র লাহা কোকওভেন থানায় অভিযোগ করেছেন, সোমবার গভীর রাতে তাঁর আবাসনের পিছনের দরজা ভেঙে ঢুকে হুমকি ও গালিগালাজ করেছে দুষ্কৃতীরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সগড়ভাঙার পুরনো ব্লক অফিস লাগোয়া সরকারি আবাসনের পরিত্যক্ত ঘরে বহু দিন ধরেই সন্ধ্যায় কিছু লোকজন জড়ো হয়। বসে নানা নেশা ও জুয়ার আসর। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এর আগেও তাঁরা এ সবের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পুলিশকেও খবর দিয়েছেন। পুলিশি টহল চালু হওয়ায় ওই সব লোকজন কিছুদিন সরে গিয়েছিল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ইদানীং পুলিশি টহলে ঢিল পড়তেই ফের রমরমা বেড়েছে দুষ্কতীদের।
হামলায় ভেঙেছে দরজা।
ব্লক অফিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী গৌরচন্দ্রবাবু পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, স্থানীয় বাসিন্দারা বারবার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাতে সব সময়েই সামিল হয়েছে তাঁর পরিবার। গত ১২ ডিসেম্বর এলাকাবাসী অবিলম্বে পাড়ার ভিতরে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করার দাবিতে কোকওভেন থানায় স্মারকলিপি দেন। এর পরেই রাতে এলাকায় পুলিশি টহল শুরু হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়েক দিন দুষ্কৃতীরা চুপচাপ থাকার পরে আবার পুলিশি টহলে ঢিলে পড়ে। এই সুযোগে ফের দুষ্কৃতীরা এলাকার পরিত্যক্ত আবাসনে ঠেক বসাতে শুরু করে। গৌরচন্দ্রবাবু অভিযোগ করেন, এর আগে ৮ মার্চ দুষ্কৃতীরা ভয় দেখানোর জন্য তাঁদের বাড়িতে ইট-পাটকেল ছোড়ে। তবে সোমবার গভীর রাতে তারা একেবারে আবাসনের পিছনের দরজা ভেঙে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গালিগালাজ ও হুমকি দিয়ে যায়। চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে আশপাশের বাসিন্দারা জেগে পড়তেই চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।
রাতেই ফোনে খবর দেওয়া হয় থানায়। পুলিশ এলাকায় পৌঁছলেও দুষ্কতীরা তার আগেই চম্পট দিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরেও ঘটনাস্থলে গিয়েছিল পুলিশ। তবে দুষ্কৃতীরা কেউ ধরা না পড়ায় আতঙ্কে গৌরচন্দ্রবাবু ও তাঁর পরিবারের লোকজন। তিনি অভিযোগ করেন, সন্ধ্যা নামতেই ঠেক বসায় দুষ্কৃতীরা। সঙ্গে চলে গালিগালাজ। গৌরচন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘পরিবার নিয়ে বাস করতে অসহায় বোধ করছি। সোমবার রাতের ঘটনার পরে আরও বিপন্ন বোধ করছি।’’ পুলিশ অবশ্য দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছে।
গত বুধবার শহরের নতুনপল্লির ফাঁসিপুকুর এলাকায় একই ভাবে গাঁজা, জুয়ার ঠেক বসানোর প্রতিবাদ করায় স্থানীয় বাসিন্দা মানিক পালকে পিটিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। সে দিন সকালে নিজের বাড়ির পাশে নর্দমা পরিষ্কার করছিলেন মানিকবাবু। অভিযোগ, সামান্য দূরেই প্রতি দিন গাঁজা, জুয়ার আড্ডা বসায় এক দল যুবক। সেখান থেকে এলাকার বাসিন্দাদের নানা সময়ে গালিগালাজ করা হয়। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে দেওয়া হয় খুনের হুমকিও। মানিকবাবু বিভিন্ন সময়ে ওই ঠেক বসানোর প্রতিবাদ করায় সে দিন দুই যুবক ইট, লাঠি, রড দিয়ে তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সগড়ভাঙায় গৌরচন্দ্রবাবুর পুত্রবধূ গার্গী লাহা নতুনপল্লির ঘটনার কথা মনে করিয়ে বলেন, ‘‘আমরা আতঙ্কিত। যে কোনও সময় বড় বিপদ হয়ে যেতে পারে।’’
পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘সব থানাকেই সতর্ক করা হচ্ছে। এই ধরনের ঠেক চলতে পারে, এই রকম সম্ভাব্য সব জায়গায় টহলদারি বাড়াতে বলা হচ্ছে।’’
—নিজস্ব চিত্র।