রায়নার সভায়। —নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটের লক্ষ্যে জোরকদমে ময়দানে নেমে পড়ল শাসকদল। পূর্ব বর্ধমানে প্রথম পঞ্চায়েতিরাজ সম্মেলনেই দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস দলের নেতা-কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিলেন, কোনও গ্রামে কেউ সামাজিক প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হয়েছেন খবর পেলে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত প্রধান বা নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মঙ্গলবার দুপুরে রায়নার সেহারাবাজার ফুটবল মাঠের ওই সম্মেলনে বিজেপিকেও নানা ভাবে কটাক্ষ করলেন তিনি। এ দিনই আর একটি সম্মেলন হয় বুদবুদের মহাকালী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে।
সভায় মন্ত্রী অরূপবাবু বলেন, ‘‘জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একগুচ্ছ সামাজিক প্রকল্প নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রামের কোন পরিবার কী কী প্রকল্পের সুবিধে পাচ্ছেন, তা দলের নেতাদের নখদর্পণে থাকা উচিত।’’ দলের নেতা-কর্মীদের তাঁর নির্দেশ, ‘‘গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে সরকারের সামাজিক প্রকল্পের কর্মসূচি প্রচার করুন। কোনও মানুষ বা পরিবার যাতে বঞ্চিত না হন তা দেখতে হবে।’’ এর পরেই তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘আর কয়েক দিন পর থেকেই আমরা গ্রামে ঘুরব। কোনও মানুষ সামাজিক প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হয়েছেন জানতে পারলে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের প্রধান বা দলীয় নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানুষের কাজ করতে না পারলে পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়ানোর আশা ছাড়তে হবে।’’
এ দিন অরূপবাবু ঘোষণা করেন, পূর্ব বর্ধমানের ২৩টি ব্লকেই ৮ জানুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্মেলন সেরে ফেলতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রাম ঘুরে সামাজিক প্রকল্পের যে রিপোর্ট উঠে আসবে, তার ভিত্তিতেই সম্মেলন হবে। সেখানে গ্রামের নেতাদের জবাবদিহি করতে হবে।’’ বিরোধীদের উদ্দেশে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আপনারা প্রার্থী খুঁজে পাওয়ার পরে কোথাও কোনও সমস্যা হলে আমাদের জানাবেন। আমরাই প্রার্থীর মনোনয়নের ব্যবস্থা করে দেব। কিন্তু প্রার্থী খুঁজে না পেলে কী করব?’’ দলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘গ্রামের নেতারা বাড়ি-বাড়ি ঘুরে রিপোর্ট তৈরি করছেন কি না দেখার জন্য নজরদারি করা হবে।’’
গুজরাতের ভোটের প্রসঙ্গ তুলে অরূপবাবু বলেন, ‘‘সি-প্লেনে চড়ে প্রচার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অমিত শাহ দেড়শো আসনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। গুজরাতের মানুষ বিজেপির স্বপ্নভঙ্গ করে দিয়েছেন। বিজেপির পতনের ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। ভেদাভেদের রাজনীতি গুজরাতের মানুষ ছুঁড়ে ফেলেছেন।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘আসানসোলে এসে প্রধানমন্ত্রী অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই ধাপ্পাবাজির বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলন করছেন। তা বন্ধ করার জন্য সিবিআই-ইডির ভয় দেখানো হচ্ছে। ভয় না পেয়ে মানুষের জন্য আন্দোলন করবেন মমতা। বাংলায় বিজেপির ঠাঁই হবে না।’’
এ দিন সন্ধ্যায় বর্ধমানে জেলা পরিষদের অ্যানেক্স হলে বর্ধমান, কাটোয়া, কালনা ও মেমারি পুরসভার সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন অরূপবাবু। সেখানে তিনি বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের কাজকর্মে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।