লক্ষ্মীর সঙ্গে সখীরা। নিজস্ব চিত্র।
ভিটে-মাটি ছেড়ে এ পার বাংলায় চলে আসার পরেও কেউ কলা বউকে পুজোর রীতি আঁকড়ে রেখেছেন। কারও বাড়িতে আবার লক্ষ্মীর পাশে রয়েছেন তাঁর দুই সখী। —এমনই বিচিত্র আচার ও রীতিনীতির মাধ্যমেই আজ, শনিবার দুর্গাপুর-কাঁকসার বিভিন্ন বাড়িতে পূজিতা হবেন মা লক্ষ্মী।
দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের এ-জোনের অশোক অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা গোবিন্দ সরকার। বাড়ির গিন্নি রত্নাদেবী প্রায় পাঁচ দশক ধরে বাড়িতে লক্ষ্মী পুজো করেন। এই বাড়িতে কলা বউকে লক্ষ্মী রূপে পুজো করা হয়। এমন রীতি কেন? পরিবারের সদস্যরা জানান, তাঁদের আদি বাড়ি ছিল ওপার বাংলার কুমিল্লা জেলায়। সেখানেই এমন রেওয়াজের শুরু। পুজো উপলক্ষে থাকে ফলের নৈবদ্য, খিচুড়ি ভোগ ও অন্যান্য উপকরণ বাড়ির মহিলারাই রান্না করেন। সরকারবাড়ির পুজোয় যোগ দেন পড়শিরাও।
প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে নৈহাটি থেকে দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের বঙ্কিমচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ে চলে আসেন পশুপতি দাস। এই বাড়ির গিন্নি মল্লিকাদেবী জানান, দুর্গাপুরে আসার পরেই শুরু হয় দেবী আরাধনা। তাঁর দাবি, সন্তান লাভের পরে মাটির প্রতিমা এনে পুজোর শুরু হয়। পড়শি, পরিজন, অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া বেশ কয়েক জন বাচ্চাদের মধ্যে ভোগ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়। ডিএসপি টাউনশিপের হর্ষবর্ধন রোডের মাধুরী চৌধুরীর বাড়িতে লক্ষ্মী পূজিতা হন পট চিত্রে। সেই চিত্রের সামনে থাকে শিসযুক্ত ঝুনো নারকেল, যা ‘লক্ষ্মী বউ’ হিসেবে মানা হয়। এ ছাড়া শ’খানেকেরও বেশি মানুষ এই বাড়িতে পুজোর ভোগ খান বলে দাবি।
দুর্গাপুর শহর ছাড়িয়ে লক্ষ্মী পুজো উপলক্ষে বিভিন্ন রীতি রয়েছে কাঁকসাতেও। কাঁকসার মাধবমাঠে রাধাগোবিন্দ সাহার বাড়ির পুজো ১০৮ বছর ধরে চলে আসছে। বাড়ির গিন্নি ৮৫ বছরের নিভাননীদেবী জানান, লক্ষ্মী প্রতিমার উচ্চতা ৫ ফুট। এখানে লক্ষ্মীর পাশেই রয়েছেন দু’জন সখী। পুজো হয় তাঁদেরও। বাড়ির পাশেই রয়েছে লক্ষ্মী পুকুর। পুজোর ঠিক এক মাস আগে থেকে সেখানে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পুজো হয়। পরদিন সকালে ওই পুকুর থেকে মাছ ধরে পড়শি, আত্মীয় ও দুঃস্থদের খাওয়ানোর বন্দোবস্ত করা হয়। পরিবারের সদস্যদের দাবি, পুজো উপলক্ষে প্রায় শ’তিনেক পাত পড়ে বাড়িতে।