বার বার গ্রেফতার ভিন্ দেশি 

১৭ ফেব্রুয়ারি, রাত সাড়ে ১২টা। পুলিশের অভিযান। ব্যাগপত্র গুছিয়ে চম্পট দেওয়ার মুখেই ধৃত তিন যুবক।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৫৩
Share:

১৭ ফেব্রুয়ারি, রাত সাড়ে ১২টা। পুলিশের অভিযান। ব্যাগপত্র গুছিয়ে চম্পট দেওয়ার মুখেই ধৃত তিন যুবক।

Advertisement

২০ ফেব্রুয়ারি, দুপুর ২টো। ধৃত এক মহিলা। পুলিশ দেখেই পিছনের দরজা দিয়ে পগারপার আরও এক মহিলা। ধৃতেরা প্রত্যেকেই এই মুহূর্তে জেল-হাজতে রয়েছেন।

দু’টি ঘটনাই নিয়ামতপুরের লছিপুরের যৌনপল্লির। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের নাগরিক। ভারতবর্ষে আসার কোনও বৈধ কাগজপত্রও মেলেনি তাঁদের কাছে। অর্থাৎ, সকলেই ‘অনুপ্রবেশকারী।’ আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তাদের মতে, এলাকার নিরাপত্তার নিরিখে এই ধরনের ঘটনাগুলি খুবই বিপজ্জনক। কিন্তু কী ভাবে তারা এলাকায় ডেরা তৈরি করছে, উঠেছে সে প্রশ্নই।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এক-দু’টি ঘটনা নয়। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে এমন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যাটা লছিপুরে বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক ওই দু’টি ঘটনার আগে ২০১৫-য় এক মহিলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই সময়েও পুলিশ দাবি করেছিল, ওই মহিলা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী।

স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা, মাঝের কয়েক বছরে পুলিশি অভিযান খানিকটা কম ছিল। সেই ‘সুযোগে’ ফের ভিড় জমাচ্ছে অনুপ্রবেশকারীরা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই বিষয়টি নিয়ে সে ভাবে ‘গা’ করে না পুলিশও। স্থানীয় বাসিন্দা তথা সাবেক কুলটি পুরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান তৃণমূল নেতা বাচ্চু রায়ের অভিযোগ, ‘‘আমরা এই যৌনপল্লিতে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে পুলিশকে বহু বার জানিয়েছি। কিন্তু লাভ হয়নি।’’ পুলিশেরই একটি সূত্রের দাবি, ধৃতেরাও জেরায় তাদের কাছে স্বীকার করেছে, এই মুহূর্তে ওই যৌনপল্লিতে অন্তত কয়েক হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন।

কিন্তু কী ভাবে তারা নিশ্চিন্তে এলাকায় থাকছে?

পুলিশ জানায়, প্রথমত, এ দেশে ঢুকে ‘নিজস্ব নেটওয়ার্ক’ কাজে লাগিয়ে নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত এলাকার কয়েক জন এই অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দেয়। দ্বিতীয়ত, এলাকার প্রভাবশালী কিছু মানুষের মদতে সেই অনুপ্রবেশকারীরা কিছু দিনের মধ্যে ভোটার, আধার, রেশন কার্ড বানিয়ে ফেলে। স্থানীয় এই ধরনের কিছু লোকের জন্যই অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে ‘নির্দিষ্ট তথ্য’ অনেক সময়ে থাকে না বলে জানান কমিশনারেটের এক কর্তা। সাম্প্রতিক একটি ঘটনায় বিষয়টি সামনে আসে। পুলিশ জানায়, গত বছর ১৭ নভেম্বর যৌনপল্লি লাগোয়া এলাকা থেকে সুজিত চৌবে নামে এক জনের বাড়ি থেকে তিন জন যুবক গ্রেফতার হয়। পুলিশের দাবি, ওই তিন জনই অনুপ্রবেশকারী। তবে ওই ক্ষেত্রে সুজিতের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করেছে পুলিশ। কিন্তু এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত সুজিত এলাকাছাড়া হয়ে যান বলে অভিযোগ। পরে অবশ্য তিনি আদালত থেকে জামিন নেন।

এই পরিস্থিতিতে জঙ্গি কার্যকলাপের আশঙ্কাও করছেন বাচ্চুবাবুরা। তবে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস বলেন, ‘‘ধৃতদের সঙ্গে কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর যোগসূত্র মেলেনি। তবে কী কারণে ওঁরা এখানে ডেরা বেঁধেছিলেন, তা পুলিশ তদন্ত করেছে।’’

তা হলে কী উদ্দেশ্যে যৌনপল্লিতে আসা এই অনুপ্রবেশকারীদের, কোন পথেই বা তারা এ দেশে ঢুকছেন, উঠেছে এ সব প্রশ্নও। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন