কাটোয়ার আনন্দ নিকেতনে। নিজস্ব চিত্র
‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, ভাই ফল খাবে গোটা গোটা, তোমরা যেন দিও না খোঁটা’— নিজের বানানো ছড়া গুনগুন করেই ভাইদের কপালে ফোঁটা দিচ্ছিলেন প্রৌঢ়া। ভাইয়েরা কেউ হাততালি দিয়ে হেসে উঠছেন, কেউ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন দিদির দিকে। কাটোয়ার সুদপুরের ‘আনন্দ নিকেতনে’ রক্তের সম্পর্কে নয়, ফোঁটা হয় মনের তাগিদে।
বছর একান্নর সায়েদা মাত্র ২৭ বছর বয়সে এসেছিলেন এখানে। তখন তাঁর মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল ছিল না। সংস্থার সদস্যেরা জানান, কলকাতায় থাকার সময়ে মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি। পরিজনেরাই এখানে রেখে যান। তারপরে এতগুলো বছর কেটে গিয়েছে। কেউই খোঁজ নেননি। সায়েদার কাছে এটাই এখন বাড়ি। রয়েছেন বছর বত্রিশের বুড়ি, জগুরা। পরিবারহীন মানুষগুলোর কাছে এই সংস্থার লোকজনই আত্মীয়। শুক্রবার সকাল থেকেই পাজামা-পাঞ্জাবি পরে তৈরি হয়েছিলেন আখতার, আনোয়ার, বিজয়েরা। জুলেখা, সায়েদা, আয়েষারা সেজেগুজে চন্দন বেঁটে থালায় মিষ্টি, কেক, হরেক নাড়ু সাজিয়ে তৈরি ছিলেন। ফোঁটা দেওয়ার পরে ভাইদের মুখে মিষ্টি তুলে দিয়ে তবেই খান তাঁরা। ফোঁটা দেওয়া হয় সংস্থার সম্পাদক, সদস্যদেরও।
পরে বাঁধাকপি, মুরগির মাংস, চাটনি দিয়ে ভাইফোঁটার ভোজ সারেন আনন্দ নিকেতনের ২৬৭ জন সদস্য। সায়েদা ভাইয়ের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলেন, ‘‘এঁরাই আমার আপনজন। এঁদের সঙ্গেই আমার আনন্দ।’’ তাঁর পাশে থাকা আনোয়ার মুখে কিছু বলতে না পারলেও প্রিয় দিদিকে জড়িয়ে ধরে আদরে বুঝিয়ে দেন, এটাই তাঁর পরিবার। সংস্থার সম্পাদক সুব্রত সিংহের কথায়, ‘‘কোনও শিশুকে শিশু সুরক্ষা কমিটি দিয়ে যায়, কাউকে স্থানীয়েরা দিয়ে যান। এখানে এসে এরা নতুন করে দিদি, মাসি, পিসি সম্পর্কগুলো খুঁজে পায়। ধীরে ধীরে সমাজের মূলস্রোতে ফেরে। এদের আনন্দের কথা মাথায় রেখে প্রতি বছরই ভাইফোঁটা পালন করা হয়।’’