ভোরেই লাইন, টাকা পেয়ে যেন যুদ্ধজয়

যেন যুদ্ধ জয় করেছেন। আসানসোলে ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসার পরে প্রাক্তন সরকারি কর্মী প্রবীর দত্তের চোখমুখ দেখে তেমনটাই মনে হচ্ছিল। তাঁকে দেখেই ঘিরে ধরে অনেকে ঘিরে ধরে প্রশ্ন করতে শুরু করে দিলেন— নতুন নোট পেলেন, কেমন দেখতে, কত সময় লাগছে টাকা পাল্টাতে?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৫০
Share:

ব্যাঙ্ক খোলার আগেই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে লোক। বৃহস্পতিবার সকালে দুর্গাপুরের শ্যামপুরে এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনের রাস্তায় ছবিটি তুলেছেন বিশ্বনাথ মশান।

যেন যুদ্ধ জয় করেছেন। আসানসোলে ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসার পরে প্রাক্তন সরকারি কর্মী প্রবীর দত্তের চোখমুখ দেখে তেমনটাই মনে হচ্ছিল। তাঁকে দেখেই ঘিরে ধরে অনেকে ঘিরে ধরে প্রশ্ন করতে শুরু করে দিলেন— নতুন নোট পেলেন, কেমন দেখতে, কত সময় লাগছে টাকা পাল্টাতে? হাতে ধরা নোটের গোছা দেখিয়ে প্রবীর অবশ্য জানালেন, নতুন নোট নয়, পুরনো পাঁচশো-হাজারের নোটের বদলে মিলেছে একশোর নোট। বাড়ির পথে হাঁটা দেওয়ার সময়ে বলে গেলেন, ‘‘যাক বাবা, এখন ক’দিন এই দিয়েই চলে যাবে!’’

Advertisement

লম্বা লাইন পড়েছিল ভোর থেকে। ব্যাঙ্ক বা ডাকঘর, সব জায়গাতেই ছিল এক ছবি। প্রথম দিনেই পাঁচশো-হাজারের পুরনো নোট পাল্টে নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায় মানকর থেকে বরাকর, সর্বত্র। তবে ডাকঘরে যাঁরা লাইন দিয়েছিলেন, তাঁদের হতাশ হতে হয়। টাকা না আসায় এ দিন নোট বদল হবে না বলে জানিয়ে দেয় ডাকঘরগুলি। নোটিস দেখেই কাছাকাছি ব্যাঙ্কে লাইন দিতে দৌড়ন গ্রাহকেরা। নতুন ৫০০ ও ২০০০ টাকার নোট হাতে পাওয়ার কৌতূহলও ছিল অনেকের। তবে হাতে গোনা কিছু ব্যাঙ্কের শাখায় ২০০০ টাকার নোট দিলেও নতুন পাঁচশোর নোট এ দিন মেলেনি। বেশির ভাগ জনই পুরনো নোটের বদলে পেয়েছেন একশোর নোট।

নোট পাল্টানোর জন্য অবশ্য বুধবার বিকেল থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে হয়ে যায় শহরে। টাকা বদল করতে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করতে হবে, সরকারের এই ঘোষণা জানার পরে শহরের নানা ফটোকপির দোকানে ছাপানো ফর্ম বিক্রির হিড়িক পড়ে। তবে বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরগুলিতে বিনামূল্যে সেই ফর্ম দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকেই সেই অপেক্ষায় থাকেননি। কিছু ব্যাঙ্ক কর্মী আবার নিজের এলাকায় বুধবার রাতেই ফর্মের ফটোকপি পরিচিতদের মধ্যে বিলি করেছেন বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

টাকা পাল্টানো হবে না, দুর্গাপুরের ডাকঘরে এমন নোটিস দেখে হতাশ বৃদ্ধ।

দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে সকালে সবার আগে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন দুর্গাপুর কোর্টের মুহুরি, বেনাচিতির সুভাষ ঘোষ। ব্যাঙ্ক খোলার আগে থেকেই পুলিশ লাইন সামলাচ্ছিল। ব্যাঙ্ক খুলতেই খানিক হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তবে এক সঙ্গে দশ জনের বেশি গ্রাহককে ভিতরে ঢুকতে দেননি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। ৫টি কাউন্টারে লেনদেন হয়। খানিক পরেই টাকার বান্ডিল নিয়ে বেরিয়ে আসেন উৎফুল্ল সুভাষবাবু। তিনি বলেন, ‘‘লাইনে দাঁড়িয়েছি অনেকক্ষণ। ব্যাঙ্কের ভিতরে কাজ হচ্ছে বেশ তাড়াতাড়ি।’’

দুর্গাপুরের বি-জোনে আইনস্টাইন অ্যাভিনিউয়ের ধারে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, একটি রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক ও প্রধান ডাকঘর রয়েছে। সকাল থেকেই পুরো এলাকা জুড়ে গ্রাহকদের ভিড়। অনেকেই ভোর থেকে লাইন দিয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সকাল থেকে ছিল পুলিশের গাড়ি। দুপুর ২টো পর্যন্ত গ্রাহকদের ভিড় দেখা গিয়েছে।

ডাকঘর খোলার সঙ্গে-সঙ্গে সাঁটিয়ে দেওয়া হয় নোটিস, নতুন নোট না আসায় টাকা তোলা বা নোট বদলানো যাবে না। শুধু জমা নেওয়া যাবে। সকাল থেকে লাইন দিয়ে থেকে এমন খবর পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন গ্রাহকেরা। বিশেষ করে সমস্যায় পড়েন প্রবীণেরা। অনেকে পাশের ব্যাঙ্কে যান, বাকিরা ফিরে যান। আসানসোলে অবশ্য পরে ডাকঘরেও নোট পাল্টানো শুরু হয়। আসানসোল বড় ডাকঘরের আধিকারিক গৌতম ঘোষ জানান, নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে যাঁরা এসেছেন তাঁদের প্রত্যেকের টাকা বদলে দেওয়া হয়েছে।

নতুন ২০০০ টাকার নোট পেয়ে নিজস্বী।

ব্যাঙ্কের কর্মী-আধিকারিকদের অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, প্রথম দিনে নোট পাল্টানোর তাড়ায় গোলমাল বাধতে পারে। সে জন্য পুলিশও মোতায়েন ছিল ব্যাঙ্কগুলিতে। কিন্তু কোথাও তেমন বড় কোনও অশান্তি না হওয়ায় দিনের শেষে স্বস্তিতে সব পক্ষই। শুধু মানকর ও কাঁকসার সিলামপুরের দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে দুপুর পর্যন্ত টাকা না আসায় গ্রাহকেরা ক্ষুব্ধ হন। পাণ্ডবেশ্বরে একটি ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা ছিনতাইয়ের চেষ্টার অভিযোগে এক যুবককে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয় জনতা।

বিকেলে দুর্গাপুরে সিটি সেন্টারে ক্ষুদিরাম সরণিতে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে ২০০০ টাকার নোট দেওয়া শুরু হয়। সেই নোট নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখা যায় গ্রাহকদের মধ্যে। অনেকে সেই নোট হাতে নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শঙ্কর বর, অমর মণ্ডলদের কথায়, ‘‘প্রথম এই নোট হাতে পেলাম। তাই একটা সেলফি তো তুলতেই হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন