পুরসা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জমায়েত বাসিন্দাদের। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল কার্যত অরক্ষিত। গরু-ছাগলের বিচরণ থেকে অবাঞ্ছিত লোকজনের আখড়া, সমস্যা ছিল নানা ধরনের। গত চার-পাঁচ মাসে তার বদল এসেছে। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সরকারি নির্দেশের পরেও রোগীদের বাইরের দোকান থেকে ওষুধ কিনতে হতো। কিন্তু এখন রোগীরা হাসপাতাল থেকেই বিনামূল্যে ওষুধ পান। চিকিৎসা পরিষেবাও আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে, দাবি এলাকাবাসীর।
এ সবের পিছনে অবদান রয়েছে ভারপ্রাপ্ত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) শেখ ফারুক হোসেনের, মনে করেন গলসি ১ ব্লকের মানুষজন। তাই পদোন্নতি হয়ে পুরসা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে তাঁর কেতুগ্রাম ১-এর বিএমওএইচ হিসেবে বদলির নির্দেশ এলেও তা আটকানোর দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা। সোমবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে জমায়েত হয়ে সেই দাবি জানালেন তাঁরা।
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে ২০-২২টি গ্রামের মানুষ নির্ভরশীল। ভাতার থেকে মাস পাঁচেক আগে এখানে আসেন ফারুক। পুরসার বাসিন্দা শাহিদ পারভিনের কথায়, ‘‘কয়েক মাস আগেও আমাদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হতো। এই বিএমওএইচ আসার পরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেই বিনামূল্যে ওষুধ মেলে।’’ সিমনোড়ের দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘চিকিৎসার মান আগের থেকে ভাল হয়েছে। খেতে বসলেও তিনি রোগী দেখার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটে এসেছেন।’’ তাঁদের দাবি, রোগী দেখানোর জন্য আগে শাসক দলের নেতাদের দ্বারস্থ হতে হতো। এখন সে সব হয় না। হাসপাতাল পরিষ্কারে জন্য বিএমওএইচ নিজে ঝাঁটা হাতে ধরেছেন— এমন ছবিও দেখা গিয়েছে। এ ছাড়া, রাজনৈতিক নেতাদের আড্ডার জায়গা হয়ে উঠেছিল স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বিএমওএইচ আসার পরে সে সব বন্ধ হয়েছে। তাই এ দিন তাঁর বদলি আটকাতে তাঁরা সরব হয়েছেন বলে জানান বিক্ষোভকারীরা।
গলসির ব্লক কংগ্রেস সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘‘বিএমওএইচ আসার পর থেকে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠেনি। আগে এখানে রোগী ভর্তি থাকলেও ওষুধ-ইঞ্জেকশন নিতে নার্সের কাছে যেতে হতো। এখন নার্সেরা রোগীদের কাছে যান।’’ স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অলোক মাঝি বলেন, ‘‘স্থানীয় মানুষজনের দাবি প্রশাসনিক স্তরে জানাব।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় বলেন, ‘‘পদন্নোতির জন্য বদলি করা হচ্ছে ওঁকে। তাঁকে যেতে না দেওয়ার জন্য এলাকাবাসী বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বলে শুনেছি। বিশদে খোঁজ নেব।’’
পুরসায় থাকতে চেয়ে স্বাস্থ্য দফতরে আবেদন করেছেন ফারুক হোসেনও। তিনি বলেন, ‘‘এই ক’মাসে এখানকার মানুষ এত ভালবেসে ফেলেছেন, বদলির নির্দেশ আসায় বুঝতে পারলাম।’’