রোগীর আপত্তি, সঙ্কটে চিকিৎসা

হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা বলেন, “রোগীর সম্মতি ছাড়া আমরা অস্ত্রোপচার করতে পারছি না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯ ২২:৩৮
Share:

জুগনু পাসি। নিজস্ব চিত্র

ট্রেন দুর্ঘটনায় পায়ের একটা অংশ কাটা গিয়েছে। তার পর থেকে হাসপাতালেই রয়েছেন বছর ছাব্বিশের জুগনু পাসি। ডাক্তারদের দাবি, ওই অংশে দ্রুত অস্ত্রোপচার না করলে ক্ষত আরও বাড়বে। কিন্তু রোগী নারাজ, তাই ওটিতে নিয়ে গিয়েও অস্ত্রোপচার করতে পারেনি হাসপাতাল। আবার ক্ষতস্থান থেকে বার হওয়া দুর্গন্ধে আপত্তি জানাচ্ছেন পাশের অন্য রোগীরা। সব মিলিয়ে দোটানায় পড়েছেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা বলেন, “রোগীর সম্মতি ছাড়া আমরা অস্ত্রোপচার করতে পারছি না। আবার ছেড়েও দিতে পারছি না। বাড়ির লোকেদের ওঁকে বোঝাতে বলা হয়েছে।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তায় ঘুরে মধু বিক্রি করেন জুগনু। থাকেন গলসি স্টেশনের কাছে ঝুপড়ি এলাকায়। সপ্তাহ দুয়েক আগে ট্রেনে করে মধু নিয়ে বর্ধমানে আসার সময় তালিত স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে চটি পড়ে যায় জুগনুর। চটি তুলতে গিয়ে ট্রেন থেকে পড়ে যান তিনি। কাটা পড়ে দুই পায়ের একটা অংশ। পরে বর্ধমান জিআরপি তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সে দিন থেকেই বর্ধমান মেডিক্যালের জরুরি বিভাগের তিন তলায় অস্থি-বিভাগের সামনের বারান্দায় রয়েছে তিনি। চিকিৎসকদের দাবি, তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচার না করলে ক্ষত জায়গায় পচন ধরে দুর্গন্ধ বের হবে। জখমের শারীরিক সমস্যা বাড়বে। ইতিমধ্যে দু’বার অস্ত্রোপচারের জন্যে টেবিলে তোলা হয়েছিল তাঁকে। শেষ মূহুর্তে আপত্তিতে তাঁকে নামাতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। জুগনু বলেন, “ট্রেনের ধাক্কা খাওয়ার পর থেকে সবসময় ভয় লাগছে। সে জন্যই অপারেশন করাতে চাইছি না। ডাক্তারবাবুদের বলেছি অন্য উপায়ে পা দুটোকে ভাল করে দিন।’’

Advertisement

ওই ওয়ার্ডে ভর্তি অন্য রোগীদের আত্মীয় সোনা মুর্মু, সন্ধ্যা বিশ্বাসদের দাবি, “খুবই দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। পাশে দাঁড়ানোর উপায় নেই। এ রকম গন্ধ বেরোলে অন্যরা অসুস্থ হয়ে পড়বেন।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৫ জুলাই জুগনুর বাবা বিনোদ পাসি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে অস্ত্রোপচার করাতে না চাইলেও, তাঁরা চান অস্ত্রোপচার করে ছেলেকে সুস্থ করে তুলুন চিকিৎসকেরা। ওই চিঠি পাওয়ার পরে অস্থি-বিভাগের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠান বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নতুন সুপার প্রবীর সেনগুপ্ত। সোমবার ওই রিপোর্ট জমা দিয়ে অস্থি বিভাগের প্রধান দেবদত্ত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জখম ব্যক্তি অস্ত্রোপচারে বারবার অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন। সে জন্য তাঁরা কিছু করতে পারছেন না। বিনোদবাবু বলেন, “আমরা জুগনুকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। অস্ত্রোপচার না করলে পায়ে পচন ধরলে আরও বেশির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন