সাক্ষ্যে নজরে সেল, সাহায্য দ্রুত শুনানিতে

মাস ছয়েক আগে ‘ক্রাইম মনিটরিং সেল’ খুলেছিল জেলা পুলিশ। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি মামলায় দ্রুত বিচারপর্ব সম্পন্ন হওয়ার পিছনে ওই সেলের ভূমিকা রয়েছে, মনে করছেন আইনজীবী ও পুলিশের কর্তারা।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫৮
Share:

কখনও গরহাজির থাকেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিক বা চিকিৎসক। কখনও আবার আসেন না গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। সাক্ষ্যগ্রহণে এমন সব সমস্যার জেরে দীর্ঘ হয় শুনানি প্রক্রিয়া। দেরি হয় বিচারে। এই সমস্যা দূর করতে মাস ছয়েক আগে ‘ক্রাইম মনিটরিং সেল’ খুলেছিল জেলা পুলিশ। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি মামলায় দ্রুত বিচারপর্ব সম্পন্ন হওয়ার পিছনে ওই সেলের ভূমিকা রয়েছে, মনে করছেন আইনজীবী ও পুলিশের কর্তারা।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩০২ ধারার প্রতিটি মামলায় ‘ক্রাইম মনিটারিং সেল’ সাক্ষ্য-সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে। তার ফলে সব সাক্ষী ঠিক দিনে এজলাসে পৌঁছচ্ছেন। আইনজীবীদের দাবি, মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শুরু হওয়ার পর থেকে দ্রুত তা শেষ হওয়ার পিছনে জেলা পুলিশের বড় ভূমিকা রয়েছে। বর্ধমানের সরকারি আইনজীবী (এপিপি) মোল্লা মহাতাবউদ্দিনের কথায়, ‘‘সাক্ষীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে তাঁদের আদালতে পাঠানোর ব্যাপারে পুলিশ গত ছ’মাস ধরে সাহায্য করছে। ফলে, নির্দিষ্ট দিনে সাক্ষীরা হাজির থাকায় শুনানিতে দেরিতে হচ্ছে না। বিচারক দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করতে পারছেন।’’

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বর্ধমানে এক বৃদ্ধ খুনের মামলায় শুনানি শুরুর মাত্র মাস পাঁচেকের মধ্যে সাজা ঘোষণা করেছেন বিচারক। খণ্ডঘোষের একটি খুনের মামলার শুনানি শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের ২২ অগস্ট। সাক্ষীদের গরহাজিরার জন্য বারবার শুনানি পিছোচ্ছিল। সরকারি আইনজীবী অজয় দাস বলেন, ‘‘পুলিশের ‘ক্রাইম মনিটারিং সেল’ গঠনের পরে সাক্ষীরা নির্দিষ্ট দিনে আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। তাতে মামলা গতি পায়।’’ দিন কয়েক আগে এই মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। পূর্বস্থলীর একটি মামলাতেও শুনানি শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে কালনা আদালত সাজা ঘোষণা করেছে সম্প্রতি।

Advertisement

এই সেল খোলার প্রয়োজন হল কেন? জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তদন্তকারী অফিসারেরা অনেক সময়ে বদলি হয়ে যান। সাক্ষ্যগ্রহণ কবে, তার নথি তাঁদের কাছে ঠিক সময়ে পৌঁছয় না। আবার অনেক সময় আইনশৃক্ষলা রক্ষার কারণ জানিয়ে পুলিশকর্মী বা আধিকারিকেরা নির্দিষ্ট দিনে আদালতে পৌঁছন না। অনেক সময়ে বিচারক বাধ্য হয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন পুলিশকর্মীকে আসার নির্দেশ দেন। একই রকম ভাবে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদেরও সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসার ক্ষেত্রে টালবাহানা তৈরি হয়। আইনজীবীরা জানান, যে কোনও মামলায় প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। নানা কারণে তাঁরাও আদালতে আসেন না। এ সবের জন্য মামলার নিষ্পত্তি হতে দেরি হয়। তা দূর করতেই এই উদ্যোগ।

এক জন ইনস্পেক্টরের তত্ত্বাবধানে ৭-৮ জন পুলিশকর্মীকে নিয়ে এই ‘ক্রাইম মনিটরিং সেল’ খুলেছে জেলা পুলিশ। এই সেলের কাজ, কোন এজলাসে কবে কী মামলা রয়েছে, তা নখদর্পণে রেখে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী অফিসার-সহ সরকারি সাক্ষীদের নির্দিষ্ট আদালতে আসা নিশ্চিত করা। সাধারণ সাক্ষীরা যাতে নির্ভয়ে আদালতে আসতে পারেন, তারও ব্যবস্থা করা।

জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট দিনে সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির থাকার ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তেমনই কেস ডায়েরি (সিডি) জমা দেওয়া নিয়ে গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না জানানো হয়েছে। এ ছাড়া আলামত (বাজেয়াপ্ত জিনিস) ঠিক সময়ে আদালতে পেশ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন