চলবে কী করে, চিন্তা কেব্‌লস বাজারে

রমরমা কমতে শুরু করেছিল বছর দশেক আগে। কিন্তু কারখানার দরজা তো বন্ধ হয়নি। কর্মীরাও চলে যাননি। তাই দোকানে ঝাঁপ ফেলে অন্য কোনও কাজের কথা ভাবতে হয়নি।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

রূপনারায়ণপুর শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৬
Share:

ঝিমিয়ে পড়েছে বেচাকেনা। —নিজস্ব চিত্র।

রমরমা কমতে শুরু করেছিল বছর দশেক আগে। কিন্তু কারখানার দরজা তো বন্ধ হয়নি। কর্মীরাও চলে যাননি। তাই দোকানে ঝাঁপ ফেলে অন্য কোনও কাজের কথা ভাবতে হয়নি।

Advertisement

এখন তা ভাবতে হচ্ছে রূপনারায়ণপুরে হিন্দুস্তান কেব্‌লস অধিগৃহীত ছ’টি বাজারের ব্যবসায়ীদের। কারখানার গেটে তালা পড়েছে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। তার পরেই বেচাকেনা আর বিশেষ নেই। ব্যবসায়ীদেরও জায়গা খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। তার বিরোধিতার করে ও পুনর্বাসনের দাবিতে কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু বিক্রিবাটা না থাকলে দোকান খোলা রেখেই বা কী হবে, দুশ্চিন্তা মাথাচাড়া দিচ্ছে।

ছ’টি বাজারে মোট ৫১০টি দোকান রয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, ভারী শিল্প মন্ত্রকের নির্দেশে সংস্থার অধিগৃহীত বাজারগুলিতে দোকান মালিকদের ব্যবসা করার অনুমতি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তাই তাঁদের কেব্‌লসের জায়গা খালি করে দিতে হবে। রাতারাতি এমন বিপর্যয় নেমে আসায় দোকানদারেরা কার্যত দিশাহারা। প্রতিবাদে তাঁরা চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে এলাকার সাংসদ, বিধায়ক, রাজ্যপালের দফতরেও। সম্প্রতি ব্যবসায়ীরা একটি বৈঠকেও বসেছিলেন।

Advertisement

ব্যবসায়ীদের তরফে নীলকমল মৌলিক বলেন, ‘‘এই বাজারই আমাদের একমাত্র রুটিরুজির সংস্থান। সেখান থেকে উঠে যাওয়ার প্রশ্ন নেই।’’ এ কথা বললেও তাঁদের আশঙ্কার মেঘ কাটছে না। কারণ, আন্দোলন করে যদি উচ্ছেদ আটকাতেও পারেন, জল-বিদ্যুৎ ছিন্ন করে দেওয়া হলে কী করবেন, সেটা তাঁদের কাছে ভাবনার। কারখানার কর্মীরা শহর ছেড়ে গেলে ক্রেতাও মিলবে না। ইতিমধ্যে সেই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলেও দোকানদারেরা জানান।

নীলকমলবাবু জানান, কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলেও মাসের গোড়ায় বিক্রিবাটা কিছুটা হতো। এখন একেবারে ঝিমিয়ে পড়েছে। আর এক ব্যবসায়ী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের আশঙ্কা, ‘‘এ বার কি তাহলে ব্যবসা গুটিয়ে অন্য কোথাও যেতে হবে?’’ প্রায় তিরিশ বছর দোকান চালানো নিমাই মাজি আবার অন্য কোথাও উঠে যাওয়ার কথা কল্পনা করতে পারেন না। কিন্তু তাঁর আফশোস, ‘‘জনবসতিই না থাকলে দোকান রেখে লাভ কী! রাতবিরেতে তালা ভেঙে জিনিসপত্র চুরি না হয়ে যায়।’’

ব্যবসায়ীদের দাবি, আপাতত কয়েক মাস কেব্‌লস কর্তৃপক্ষ জল-বিদ্যুতের সংযোগ ছিন্ন না করার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু তাতে তাঁরা বিশেষ ভরসা রাখতে পারছেন না। তাই রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কাছে সংযোগের জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সে জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ব্যবসায়ীদের ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট নিতে হবে।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সরকারের তরফে আমরা বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।’’ গভীর নলকূপ খনন করে বা জনস্বাস্থ্য কারিগরির পাইপলাইন বসিয়ে পানীয় জলের ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্যামল মজুমদার। এমন সহযোগিতার আশ্বাসে ব্যবসায়ীরা আশার আলো দেখেছেন ঠিকই। কিন্তু কারখানার আবাসন খালি হয়ে গেলে শেষ রক্ষা কী করে হবে, ঘুরপাক খাচ্ছে সেই প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন