Madhyamik 2023

পরীক্ষার্থী কমার কারণ নিয়ে চর্চা নানা মহলেই

আইনজীবীদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, বুধবার হাই কোর্টে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে বিচারপতি বসু মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:০৪
Share:

উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। — ফাইল চিত্র।

মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যাওয়া নিয়ে বুধবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। এইআবহে, জেলা শিক্ষা দফতরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে, শুধু পশ্চিম বর্ধমানেই গত বারের তুলনায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ১০,৫৯৪ জন। গত বার পরীক্ষা দিয়েছিল ৩৩,২৬৭ জন। এ বার সেটাই ২২,৬৭৩ জন। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি, তা নিয়ে নানা মত উঠে এসেছে। এক পক্ষ যখন পরিকাঠামোগত নানা খামতির কথা বলছেন, অন্য দিকে তখনপ্রক্রিয়াগত কিছু কারণও উঠে আসছে আলোচনায়। পাশাপাশি, কিছু অভিভাববকের বক্তব্যে সরকারি বাংলামাধ্যম স্কুলে পড়ানোর ক্ষেত্রে ‘অনীহা’র প্রসঙ্গও উঠে এসেছে।

Advertisement

আইনজীবীদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, বুধবার হাই কোর্টে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে বিচারপতি বসু মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এখন থেকেই রাজ্যকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। পাশাপাশি, মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যক্রম ঠিক করার জন্য তিনি পরামর্শ দেন বলে আইনজীবীদের দাবি। বিচারপতি বসুর পর্যবেক্ষণ, এ বছর মাধ্যমিকে চার লক্ষ পরীক্ষার্থীকমে গিয়েছে। এটা কেন হল রাজ্যকে ভাবতে হবে।

কেন এই পরিস্থিতি, তা নিয়ে নানা ব্যাখ্যা উঠে আসছে। জেলা শিক্ষা দফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা জানাচ্ছেন, ২০১৭ থেকে রাজ্যে স্কুলে ভর্তির নিয়মে বদলেছে। ঠিক হয়, ছ’বছর পূর্ণ না হলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া যাবে না। আগে নির্দিষ্ট নিয়ম ছিল না। ফলে, পাঁচ বছর পূর্ণ হলেই ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি করতেন বহু অভিভাবক। এই নিয়মের ফলেই মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে বলে দাবি ওই শিক্ষা-কর্তার। ওই কর্তার দাবি, পরের বছর আবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে। জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুনীতি সাঁপুইয়ের দাবি, “পরীক্ষার্থী কমা নিয়ে রাজ্য জুড়ে সমীক্ষা করেছে শিক্ষা দফতর। পরের বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা আবার বাড়বে, এটা সমীক্ষাতেইদেখা যাচ্ছে।”

Advertisement

শিক্ষা দফতরের এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত মাধ্যমিকের ‘ডিস্ট্রিক মনিটরিং টিমের’ সদস্য তথা তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির পশ্চিম বর্ধমানের সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায়। তিনি জানাচ্ছেন, শিক্ষা দফতর প্রতিটি স্কুলের কাছে পরীক্ষার্থী কমার কারণ জানতে চেয়েছিল। রাজীবের দাবি, তিনি যে স্কুলে পড়ান, সেই আসানসোল চেলিডাঙা হাইস্কুল থেকে যে রিপোর্ট পাঠানো হয়, তাতে দেখা যাচ্ছে ২০১৭-য় পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয় ৯৪ জন পড়ুয়া। মাধ্যমিক দিচ্ছে ৬১ জন। ১২ জন টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। কয়েক জন স্কুলছুটও রয়েছে বলে দাবি তাঁর। তবে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক(টিচার ইনচার্জ) পূর্ণচন্দ্র ঘোষের বক্তব্য, “আমাদের হিসাবে, পরের বছর ১২৫ জনের মতো পরীক্ষার্থী থাকবে। তবে গত বছর এই সংখ্যাটা ছিল ১৫১ জনের মতো।”

তবে ভিন্ন মত শুনিয়েছেন বাম প্রভাবিত নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির পশ্চিম বর্ধমানের সম্পাদক অমিতদ্যুতি ঘোষ। তাঁর দাবি, “কোভিড ও লকডাউনের জেরে ব্যাপক স্কুলছুট হয়েছে। রাজ্যের স্কুলছুটদের ক্লাসের ফেরানোর পরিকল্পনা যে কার্যকর হয়নি, তা সরকারি সমীক্ষাতেই জানা গিয়েছে। ওই সমীক্ষাতে দেখা যাচ্ছে, এ বছর পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করিয়েও প্রায় দু’লক্ষ পড়ুয়া পরীক্ষা দিচ্ছে না।” পাশাপাশি, ওই সংগঠনটি রাজ্যের স্কুলগুলির পরিকাঠামোগত অভাব, শিক্ষক কম থাকার মতো বিষয়গুলিও পরীক্ষার্থী কমার অন্যতম কারণ বলে দাবি করেছে। এ দিকে, বিজেপি প্রভাবিত বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সঙ্ঘের জেলা সম্পাদক চঞ্চল রুইদাসের দাবি, “ভর্তির বয়স বাড়িয়ে দেওয়া, স্কুলছুটদের সে ভাবে না ফেরাতে পারারজন্যই এই হাল।”

এ সবের সঙ্গে উঠে আসছে ইংরেজিমাধ্যম স্কুলের সংখ্যা বৃদ্ধি। জেলা শিক্ষা দফতরের হিসাবে, জেলায় মোট ৩৭৫টি ইংরেজিমাধ্যম স্কুল আছে। গত দশ বছরে এই সংখ্যাটি প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে বলে সূত্রের দাবি। এই স্কুলগুলিতে কেন ছেলেমেয়েদের পাঠাচ্ছেন অভিভাবকেরা? অভিভাবক মহম্মদ জাহাঙ্গির, পলাশ আচার্যেরা বলছেন, “বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনায় বুঝতে পারছি, ছেলেমেয়েদের চলতি সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলেই ভর্তি করতে হবে। এটা ওদের ভবিষ্যতেরজন্যই জরুরি।” তবে, পরীক্ষার্থী আগামী বছর বাড়বে বলে শিক্ষা দফতর যে দাবি করেছে, তা মেলে কি না সে দিকেই তাকিয়ে শিক্ষকমহলের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন