Purba Bardhaman

Cancer: কেমোথেরাপির যন্ত্রণা সহ্য করেই মাধ্যমিকের প্রস্তুতি ক্যানসার আক্রান্ত সামিনার

সামিনা জানায়, তার দুই কানের নিচে গলার অংশে’ ক্যানসার বাসা বেঁধেছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এখনও খাওয়া দাওয়া ভাল ভাবে করতে পারছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:২৭
Share:

বাবা ও মায়ের সঙ্গে সামিনা। নিজস্ব চিত্র।

শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণ ব্যাধি ক্যানসার। তা বলে জীবনযুদ্ধে হার মানতে চায় না সামিনা খাতুন। পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকের স্কুল ছাত্রীর লক্ষ্য একটাই— মারণরোগের যন্ত্রণা সহ্য করে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া। সাফল্যের সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। মনের জেদকে সম্বল করেই রামনাথপুর গ্রামের শেখপাড়ার ওই কিশোরী লক্ষ্যপূরণের স্বপ্ন বুনছে।

সামিনার বাবা শেখ আলম খেতমজুরের কাজ করেন। মা নূরজাহান বেগম গৃহবধূ। ছোট্ট দু’কুঠুরি ঘরে বসবাস করেন গরিব পরিবারটির। সামিনার দিদি আসলিমা বিবাহিতা। ছোট বয়স থেকেই লেখাপড়ায় সামিনার আগ্রহ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ সম্পূর্ণ করে সামিনা ভর্তি হয়েছিল স্থানীয় বনবিবিতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই ছাত্রী সামিনার শারীরিক অসুস্থতা শুরু হয়। তাঁর বাবা তাকে জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান চিকিৎসার জন্য। কিন্তু অসুস্থতা না সারায় বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। রিপোর্টে ধরা পড়ে সামিনার শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার।

Advertisement

তার পর থেকে টানা দু’বছর ধরে চিকিৎসা চলছে। এখন নিয়ম করে সামিনাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ’কেমোথেরাপি’ এবং ’রেডিয়েশন থেরাপি’ নিতে যেতে হয়। এর জন্য মাথার চুল সব উঠে যাওয়ায় সামিনা প্রথমে একটু মুষড়ে পড়েছিল। তা ছাড়া কেমোর যন্ত্রণাও সহ্য করতে হয়। তবে এখন তা নিয়ে আর মাথা ঘামাতে চায় না। মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করাই তার এক মাত্র লক্ষ্য।

সামিনা জানায়, তার দুই কানের নিচে গলার অংশে’ ক্যানসার বাসা বেঁধেছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। চিকিৎসা চলছে ঠিকই তবে এখনও খাওয়া দাওয়া সে ভাল ভাবে করতে পারছে না। গলায় খুব ব্যাথা থাকায় ’ভাত গিলে খেতে’ কষ্ট হয়। তাই পাতলা সুজি খেয়েই কোনও রকমে পেট ভরাতে হচ্ছে। আলম বলেন, “আমি খেতমজুরির কাজ করে যে টুকু রোজগার করি তা দিয়েই পরিবারের সকলের দিন গুজরান হয় । দু’বছর ধরে আমার ছোট মেয়ের ‘ক্যানসার’ রোগের চিকিৎসা চলছে। কিন্তু টাকার অভাবে তাকে পুষ্টিকর খাবার পারছি না।’’

Advertisement

তবে সামিমার স্কুলের শিক্ষকরা এবং জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহমুদ খান, কর্মাধ্যক্ষ ভূতনাথ মালিক, স্কুলের পরিচালন কমিটির সদস্য শেখ জিয়ারুল রহমান-সহ কয়েকজন শুভানু্ধ্যায়ী আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই সামিনার ‘কেমোথেরাপি’ এবং ‘রেডিয়েশনথেরাপির’ জন্য বর্ধমান হাপাতালে যাতায়াত ও ওষুধের খরচ চালানো যাচ্ছে বলে জানান আলম। সামিনার মা নূরজাহান বেগম বলেন ‘‘বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই মেয়ের চিকিৎসা চলছে। কোনও সহৃদয় মানুষ যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তবে মেয়েকে খুব উপকার হয়।’’

বনবিবিতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল রায় বলেন, ‘‘সামিনা খাতুন আমাদের বিদ্যালয়ের এ-বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। দু’বছর আগে ওর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। তারপর থেকে ধারাবাহিক ভাবে ওর চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসার জন্য বিদ্যালয়ের তরফে যতটা সম্ভব সামিনাকে সাহায্য করা হচ্ছে।’’ জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, “ব্লক প্রশাসনও মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে অসুস্থ ছাত্রী সামিনার পাশে থাকবে। ওর যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হবে তা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন