CBI Investigation

মায়ের উপর রাগ করে বাড়ি ছাড়ে! তার পরেই পাচারকারীদের খপ্পরে রায়নার ছাত্রী, আদালতে চার্জশিট সিবিআইয়ের

২০২৩ সালের ২২ আগস্ট সফিকুল ও জসিমউদ্দিন গ্রেফতার হয়। বাকিরা চলতি বছরের অগস্ট মাসে গ্রেফতার হয়। জসিমউদ্দিন ও সফিকুল জামিনে মুক্ত রয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ২৩:০৮
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

রাজস্থান থেকে উদ্ধার হয়েছিল পূর্ব বর্ধমানের রায়নার স্কুলছাত্রী। সেই ঘটনায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই। পুজোর ছুটি চলাকালীন সিবিআইয়ের তরফে চার্জশিট পেশ করা হয়। সোমবার তা পকসো আদালতে পাঠানো হয়েছে। পকসো আদালতের বিচারক দেবশ্রী হালদার চার্জশিট গ্রহণ করেছেন।

Advertisement

সিবিআই সূত্রে খবর, চার্জশিটে চার মহিলার নাম রয়েছে। চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসাবে নাম রয়েছে শেখ সফিকুল, শেখ জসিমউদ্দিন, রহিম শেখ ওরফে খোকন, রানু খাতুন ওরফে রানি, মহম্মদ বেলাল খান, রমেশ কুমার, ভরত কুমার, জগদীশ কুমার, দিলীপ কুমার, মিনা দাফুবেন, দিলীপ ভাই, রাতা রাম, শির্মলা বেগম খাতুন ওরফে মাজুকি বিবি, আকতার খান ও সালেহা খাতুন ওরফে নুরজাহান। সফিকুল ও জসিমউদ্দিনের বাড়ি খণ্ডঘোষ থানা এলাকায়। রহিমের বাড়ি মেমারি থানার বিজরায়, শির্মলার বাড়ি বর্ধমান থানার দুবরাজদিঘিতে, আকতারের বাড়ি বর্ধমান শহরের মেহেদিবাগান এলাকায়। আসানসোলের গুলজার মহল্লা রোডে সালেহার বাড়ি। বেলালের বাড়ি আসানসোল রেলপাড় এলাকায়। বাকিদের বাড়ি রাজস্থানের পালি জেলার বিভিন্ন এলাকায়।

২০২৩ সালের ২২ আগস্ট সফিকুল ও জসিমউদ্দিন গ্রেফতার হয়। বাকিরা চলতি বছরের অগস্ট মাসে গ্রেফতার হয়। জসিমউদ্দিন ও সফিকুল জামিনে মুক্ত রয়েছে। ২৯ পাতার চার্জশিটে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার ডিএসপি একে দাবাস ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ তুলে ধরেছেন।

Advertisement

সিবিআই চার্জশিটে জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৯ অগস্ট রায়না থানা এলাকার ওই ছাত্রী অপহৃত হয় বলে অভিযোগ করা হয় পরিবারের তরফে। আদতে ৬ অগস্ট সন্ধ্যায় নিখোঁজ হয় ওই ছাত্রী। পরিবার অভিযোগ করে জানায়, ৯ অগস্ট সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ওই ছাত্রী টিউশন পড়তে বার হয়। তার পর থেকে তার হদিস মিলছিল না। যদিও সিবিআইয়ের তদন্তে অন্য তথ্য উঠে এসেছে। সিবিআই দাবি করেছে, ৬ অগস্ট মোবাইলে কথা বলার জন্য মায়ের সঙ্গে ওই ছাত্রীর মতবিরোধ হয়। মোবাইলে অত্যধিক কথা বলার জন্য মা ওই ছাত্রীর মোবাইল ভেঙে ড্রেনে ফেলে দেন। রাগে বাড়ি ছাড়ে ওই ছাত্রী। ছাত্রীর মা অভিযোগ জানানোর পরেও থানা মামলা রুজু করেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখালে মামলা রুজু হয়।

সিবিআই সূত্রে খবর, বাড়ি ছাড়ার কথা তার এক বান্ধবীকে জানায় নির্যাতিতা। সেই বান্ধবী সফিকুলকে বিষয়টি জানায়। সফিকুল কাছেই একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন। সিবিআই জানিয়েছে, সফিকুল ছাত্রীকে সেখানে আসতে বলেন। তার পরে লরি পার্কিংয়ের জায়গায় নিয়ে গিয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন তিনি। সফিকুল পরে বিষয়টি তাঁর বন্ধু জসিমউদ্দিনকে জানান। পরে নির্যাতিতাকে সফিকুল সদরঘাট সেতুর কাছে ছেড়ে দেন।

তদন্তকারী সিবিআই সূত্রে খবর, সদরঘাট সেতু থেকে জসিমউদ্দিন ছাত্রীকে বাঁকুড়া মোড়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন। ৭ অগস্ট জসিমউদ্দিন ছাত্রীকে বর্ধমান স্টেশনে ছেড়ে দেন। সেখান থেকেই পাচার চক্রের হাতে পড়েন ছাত্রী। রহিম দীর্ঘ দিন ধরে মানব পাচারে জড়িত বলে অভিযোগ। তিনি ছাত্রীকে রানু খাতুনের কাছে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ, বিক্রির আগে রহিম ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন।

৬ আগস্ট রাজস্থান থেকে রমেশ, জগদীশ ও ভরত এবং তাঁর মা আসানসোলে যান। রমেশ ও জগদীশ ভরতকে ভাল পাত্রী জোগাড় করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। এর পরে ৮ অগস্ট আড়াই লক্ষ টাকায় নির্যাতিতাকে বিক্রি করা হয় ভরতের কাছে। জাল নথিপত্র তৈরি করে ছাত্রীকে প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে ভরতের সঙ্গে আসানসোলে বিয়ে দেওয়া হয়। সেদিনই আসানসোল থেকে ট্রেনে চেপে রাজস্থানের উদ্দেশ্যে ছাত্রীকে নিয়ে রওনা হন ভরত, রমেশ, জগদীশ ও তার মা। ১০ আগস্ট তারা রাজস্থানে পৌঁছোন।

পরে ভরত ছাত্রীকে রমেশের কাছে পাঠিয়ে দেন। রমেশ তাঁকে দিলীপের বাড়িতে নিয়ে যান। কিছু দিন পর রমেশ ও দিলীপ ছাত্রীকে নিয়ে আসানসোলে যান। পরে আড়াই লক্ষ টাকার বিনিময়ে ছাত্রীকে রাতা রামের কাছে বিক্রি করা হয়। রাতা রাম ছাত্রীকে বিয়ে করে। তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। গোটা ঘটনায় একটি বড়সড় মানব পাচার চক্রের সুনিপুণ পরিকল্পনা রয়েছে বলে সিবিআই দাবি করেছে। চক্রটির নেটওয়ার্ক বর্ধমান ও আসানসোলে রয়েছে। চক্রটি মূলত ভাল কাজ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে মেয়েদের রাজস্থান ও গুজরাতে নিয়ে গিয়ে মোটা টাকায় বিক্রি করে বলে সিবিআই জানিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement