স্কুলের বাইরে ইটভাটার শিশুরা, নেই নজর

বাবা-মা ইটভাটায় কাজ করেন। হাত লাগায় তাঁদের ছোট্ট ছেলে বা মেয়েটিও। তা না হলে হয় ভাটা লাগোয়া পরপর ইট দিয়ে সাজিয়ে তৈরি ঘুপচি ঘরে খেলাধুলো করে কাটিয়ে দেয় দিনটা। অথবা বেরিয়ে পড়ে ঘুরতে। ইটভাটায় কাজ করতে আসা শ্রমিকদের ছেলেমেয়েরা এ ভাবেই রয়ে যাচ্ছে শিক্ষার বাইরে।

Advertisement

অর্পিতা মজুমদার

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭ ০০:২৯
Share:

হাসিখেলায়: কাঁকসার এক ইটভাটায় শ্রমিকদের সন্তানেরা। নিজস্ব চিত্র।

বাবা-মা ইটভাটায় কাজ করেন। হাত লাগায় তাঁদের ছোট্ট ছেলে বা মেয়েটিও। তা না হলে হয় ভাটা লাগোয়া পরপর ইট দিয়ে সাজিয়ে তৈরি ঘুপচি ঘরে খেলাধুলো করে কাটিয়ে দেয় দিনটা। অথবা বেরিয়ে পড়ে ঘুরতে। ইটভাটায় কাজ করতে আসা শ্রমিকদের ছেলেমেয়েরা এ ভাবেই রয়ে যাচ্ছে শিক্ষার বাইরে।

Advertisement

কাঁকসা ব্লকে ইটভাটার সংখ্যা গোটা পঞ্চাশ। সেখানে এই সমস্যা নজরে আসার পরে ব্লক প্রশাসনের তরফে ভাটা মালিকদের সঙ্গে বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিডিও অরবিন্দ বিশ্বাস জানান।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকসার ইটভাটাগুলিতে মূলত পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলার নানা জায়গা এবং ওড়িশা, বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে শ্রমিকেরা আসেন কাজ করতে। প্রতি বছর অক্টোবরে তাঁরা আসেন। বর্ষা নামার আগে মে মাস নাগাদ ফিরে যান। অর্থাৎ, বছরের প্রায় ৮ মাস তাঁরা ইটভাটাতেই থাকেন। সঙ্গে থাকে পরিবার।

Advertisement

কাঁকসার বিভিন্ন ইটভাটায় শ্রমিকদের কয়েকশো ছেলেমেয়ে থাকে। তিন থেকে দশ বছর, নানা বয়সের ছেলেমেয়ে রয়েছে সেখানে। নিজেদের এলাকায় মাত্র ৪ মাস থাকার কারণে সেখানকার স্কুলে ভর্তি হতে পারে না তারা। আবার ইটভাটায় কাজ করতে এসেও বাবা-মায়েরা তাদের স্থানীয় স্কুলে ভর্তি করান না। ফলে, বেশির ভাগ শিশুই পড়াশোনা জানে না, এমনকী অক্ষরজ্ঞান ও নেই অনেকেরই।

বিডিও অরবিন্দবাবু জানান, ইটভাটার মালিকেরা অস্থায়ী ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু শ্রমিকদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করছে কি না, সে নিয়ে সাধারণত আগ্রহ থাকে না মালিকদের। শ্রমিক পরিবারগুলি দিনভর কাজে ব্যস্ত থাকে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা শেখানোর সময় তাদের বিশেষ থাকে না।

বিহারের দুমকা থেকে কাজ করতে আসা খুকুমনি সোরেন, বাসন্তি মুর্মু, বালি হাঁসদারা বলেন, “সারা দিন কাজ না করলে রোজগার কমে যাবে। ছেলেমেয়েদের স্কুল নিয়ে ভাবব কখন!’’ তাঁদের দাবি, ছেলেমেয়েরা একটু বড় হলে তাঁদের সঙ্গেই কাজে লেগে পড়ে। যদিও ইটভাটা মালিকেরা শিশুশ্রমিক কাজে লাগানোর কথা মানতে চাননি।

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকসায় ৩২৭টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আছে। এ ছাড়া প্রাথমিক স্কুল, মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। ইটভাটা থেকে সেগুলির দূরত্ব খুব বেশি নয়। বিডিও জানান, ইটভাটা মালিকেরা উদ্যোগী হলে সমস্যার সমাধান সহজে হবে।

বিডিও অরবিন্দবাবু বলেন, ‘‘এর আগে সব ইটভাটায় শৌচাগার ছিল না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইটভাটা মালিকদের সচেতন করার পরে সেই সমস্যা মিটেছে। এ বার যাতে শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের স্কুলমুখী করা যায় সে জন্য ইটভাটা মালিকদের সঙ্গে দ্রুত বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

ওই ছেলেমেয়েদের অনেকে আবার হিন্দিভাষী। বিডিও আশ্বাস দেন, প্রয়োজনে তাদের হিন্দি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করার ব্যাপারেও উদ্যোগ হবে প্রশাসনের তরফে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement