কোল ব্লক পেয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ডিপিএলে

নিলামে পাওয়া বড়জোড়ার ‘ট্রান্স দামোদর কোল ব্লক’ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে লোকসানে ধুঁকতে থাকা রাজ্য সরকারি বিদ্যুত্‌ উত্‌পাদন সংস্থা ‘দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড’ (ডিপিএল)। সেখানকার কয়লা দিয়ে দ্রুত অষ্টম ইউনিট চালু করতে চান কর্তৃপক্ষ। আনুষ্ঠানিক ভাবে খনি নিলাম এবং কয়লা উত্তোলন শুরু হওয়ার মাঝে বেশ কিছু আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া থাকে।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৫ ০১:৩৪
Share:

আবার বিদ্যুত্‌ উত্‌পাদন হবে আগের মতো, আশায় সংস্থার কর্মী-আধিকারিকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

নিলামে পাওয়া বড়জোড়ার ‘ট্রান্স দামোদর কোল ব্লক’ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে লোকসানে ধুঁকতে থাকা রাজ্য সরকারি বিদ্যুত্‌ উত্‌পাদন সংস্থা ‘দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড’ (ডিপিএল)। সেখানকার কয়লা দিয়ে দ্রুত অষ্টম ইউনিট চালু করতে চান কর্তৃপক্ষ। আনুষ্ঠানিক ভাবে খনি নিলাম এবং কয়লা উত্তোলন শুরু হওয়ার মাঝে বেশ কিছু আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া থাকে। তা দ্রুত সম্পন্ন করতে নিয়মিত দুর্গাপুর-দিল্লি যাতায়াত করছেন সংস্থার আধিকারিকেরা।

Advertisement

গত বছর ৯ জুলাই বর্ধমান থেকে রিমোটের সাহায্যে আড়াইশো মেগাওয়াট উত্‌পাদন ক্ষমতার অষ্টম ইউনিটটির উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রায় সতেরোশো কোটি টাকা ব্যয়ে সেটি তৈরি করে ‘ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড’ (ভেল)। কিন্তু এখনও সেটি বাণিজ্যিক ভাবে উত্‌পাদনক্ষম হয়ে ওঠেনি। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানা ও গৃহস্থালীর বিদ্যুত্‌ সরবরাহের জন্য ১৯৬০ সালে ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দু’টি ইউনিট নিয়ে যাত্রা শুরু ডিপিএলের। ১৯৬৪ সালে ৭৭ মেগাওয়াটের দু’টি এবং দু’বছর পরে আরও একটি ইউনিট চালু হয়। ১৯৮৭ সালে ১১০ মেগাওয়াটের ষষ্ঠ ইউনিটটি গড়ে ওঠে। ২০০৮ সালের মে মাসে চালু হয় চিনা সংস্থার তৈরি ৩০০ মেগাওয়াটের সপ্তম ইউনিট। প্রথম পাঁচটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। উত্‌পাদন খরচ বেশি হয় বলে ষষ্ঠ ইউনিটটি চালানো যায় না। নানা কারণে সপ্তম ইউনিটটি মাঝে-মাঝেই বন্ধ থাকে। ২০১৩ সালের শেষ থেকে প্রায়ই ডিপিএলের উত্‌পাদন শূন্যে নেমে যায়। গ্রিড থেকে বিদ্যুত্‌ কিনে সরবরাহ করে সংস্থাটি।

লোকসান বাড়তে বাড়তে এ বছর তিনশো কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সংস্থার কর্মীরা। সংস্থা বাঁচাতে রাজ্যের অন্য সরকারি বিদ্যুত্‌ সংস্থার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়েছিল ডিপিএলের পরিচালন সমিতি। কিন্তু সেই সংস্থা ডিপিএলকে নেওয়ার ব্যাপারে উত্‌সাহ দেখাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে অষ্টম ইউনিট চালু করে ফেললে ফের চাকা ঘোরার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন ডিপিএল কর্তৃপক্ষ। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ইউনিটটি চালু না হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ, কয়লার অপর্যাপ্ত জোগান। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে কয়লা কিনে বিদ্যুত্‌ উত্‌পাদন করে ডিপিএল। অভিযোগ, সেই কয়লার দাম বেশি পড়ে। দূরত্বের কারণে পরিবহণ খরচও বেশি দিতে হয়। তাছাড়া জোগানও সব সময় পর্যাপ্ত নয়।

Advertisement

সমস্যা মেটাতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বড়জোড়ার কয়লা ব্লকটি নিলামে হস্তগত করে ডিপিএল। তা থেকে বছরে এক মিলিয়ন টন কয়লা তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থার। এক আধিকারিক জানান, নিজস্ব কোল ব্লক থেকে তুলনায় কম দামে, ভাল মানের কয়লা পাওয়া যাবে। তাছাড়া মাত্র ১০-১২ কিলোমিটার দূর থেকে কয়লা আনা-নেওয়ার খরচও পড়বে কম। এর ফলে সংস্থার বিদ্যুত্‌ উত্‌পাদন ব্যবস্থা নিয়মিত হবে। এমনকী, বিদ্যুত্‌ মাসুল কমানোর কথাও ভাবার সুযোগ পাবে সংস্থা। তিনি বলেন, “সম্ভবত খুব শীঘ্রই আগের মতো বিদ্যুত্‌ উত্‌পাদনকারীর ভূমিকায় দেখা যাবে ডিপিএলকে।”

ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, নিলাম এবং কয়লা উত্তোলন শুরুর মাঝে বেশ কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে, যা বেশ সময়সাপেক্ষ। কিন্তু তা দ্রুত সম্পন্ন করে কয়লা তোলার প্রক্রিয়া চালু করতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। সংস্থার আধিকারিকেরা সে জন্য নিয়মিত দিল্লি যাওয়া-আসা করছেন। ইতিমধ্যে কয়লা মন্ত্রকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চুক্তি সারার কাজ হয়ে গিয়েছে। সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, “ঠিক কবে থেকে কয়লা তোলা শুরু করা যাবে, তা বলা মুশকিল। তবে এখনও পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাক চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন