পুজোর টিজারে জোর টক্কর

মণ্ডপ গড়া অনেকটাই বাকি। কিন্ত লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে ‘টিজারে’। কেউ শহরের দেওয়ালে পুজোর বিজ্ঞাপন দিয়েছেন ছড়ায়, কেউ আবার ভরসা রেখেছেন এক লাইনে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২০
Share:

বর্ধমান শহর জুড়ে এমনই সব পোস্টারে চলছে পুজো উদ্যোক্তাদের ‘লড়াই’। ছবি: উদিত সিংহ।

মণ্ডপ গড়া অনেকটাই বাকি। কিন্ত লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে ‘টিজারে’।

Advertisement

কেউ শহরের দেওয়ালে পুজোর বিজ্ঞাপন দিয়েছেন ছড়ায়, কেউ আবার ভরসা রেখেছেন এক লাইনে।

এত দিন কেউ কারও দুর্গাপুজোর থিম যাতে না জানতে পারে সেই চেষ্টায় ব্যস্ত থাকতেন উদ্যোক্তারা। মাস খানেক আগে থেকে গোপন বৈঠক, ঢাকা দিয়ে মণ্ডপ গড়ার কাজ চলত। একেবারে ষষ্ঠী-সপ্তমীতে গিয়ে জানতে পারা যেত কে কেমন টক্কর দিল। কিন্তু এখন লড়াইয়ের ধরণটাই বদলে গিয়েছে। আগে থেকে মূর্তির, মণ্ডপের বিশেষত্ব জানিয়ে দর্শক টানছেন উদ্যোক্তারা।

Advertisement

কার্জন গেট চত্বর হোক বা জিটি রোড, পুজোর বিজ্ঞাপনে মুড়ে গিয়েছে বর্ধমান শহর। বাদ নেই অলিগলিও। পুজোর মাস দুয়েক আগে থেকেই শুরু হয়েছে এই প্রবণতা। পুজো উদ্যোক্তাদের দাবি, গত বছর হোর্ডিংয়ে নজরকাড়া বিজ্ঞাপন দেখে ভিড় উপচে পড়েছিল মণ্ডপে। এমনকী, কয়েকটা মণ্ডপে নিরাপত্তারক্ষী রাখতে হয়েছিল ভিড় সামাল দিতে। এ বার তাই টিজারে টক্কর দিতে শুরু করেছেন তাঁরা।

কারও বিজ্ঞাপনে লেখা রয়েছে, ‘নীল পৃথিবী’, ‘আলিবাবা চল্লিশ চোর’। কোথাও কার্টুন চরিত্রকে তুলে ধরে লেখা হয়েছে, ‘পিঁপড়ে থেকে হাতি/ সবাই আমার সাথি/ জঙ্গল আমার ধাম/ মোগলি আমার নাম’। কেউ আবার ছড়া করে লিখেছেন ‘শহরের সাদা কাশ, আলোমগঞ্জের ছোঁয়ায় সাদা হাঁস’। কোনও কোনও উদ্যোক্তা আবার ভরসা রেখেছেন অল্প কথায়। যেমন, ‘সমুদ্র উপকূলে অ্যানাকোন্ডা’, ‘ভূমিকম্প’ বা ‘সর্পদেবীর গুহা’। উদ্যোক্তাদের দাবি, লেখা আর ছবি দেখে আগে থেকেই আগ্রহ তৈরি হবে। ভিড় বাড়বে আরও।

কয়েক বছর আগেও অবশ্য শহরের পুজো এমনটা ছিল না। সাবেক নিয়ম মেনে রথযাত্রার দিন বাড়ির পুজোর মতো কোনও কোনও মণ্ডপে প্রতিমার কাঠামো বাঁধার কাজ শুরু হতো। এখন অবশ্য কলকাতার ঢঙে পুজোর মহড়া হয়ে যাচ্ছেন খুঁটি পুজোয়। কে, কত ভাল ভাবে খুঁটি পুজো করছেন, কোনও তারকা আসছেন কি না সবই লড়াইয়ের অঙ্গ। বিশেষত, গত বছর কলকাতার ‘এত বড় সত্যি!’—টিজারটি যেভাবে জেলার শহরগুলিতে ছড়িয়েছিল তা দেখেই হোর্ডিংয়ের লড়াই জমে গিয়েছে বলে জানান বহু উদ্যোক্তা।

এক পুজো উদ্যোক্তা মণীশ সিংহের কথায়, ‘‘প্রত্যেকেই এখন ঝাঁ-চকচকে ব্যাপার চান। সে জন্য বাড়ির পাশের দোকানের থেকে শপিং মলগুলিতে ভিড় বেশি হয়। তেমনি, পুজো মণ্ডপকেও আধুনিক ভাবে দেখতে চান দর্শকেরা। তাই আমরা কী করছি, দর্শক জানিয়ে আকর্ষিত করে তুলতে চাইছি।’’ আর একটি বড় পুজোর উদ্যোক্তা সুমন রায়চৌধুরীও বলেন, ‘‘আগে কে, কী থিম করছে, তা আস্তিনের তাসের মতো লুকিয়ে রাখা হতো। আর এখন থিম আগেভাগে জানানোটাই রীতি।”

আবার দর্শক টানার পাশাপাশি স্পনসর জোগাড় করাও এই প্রচার, বিজ্ঞাপনের একটা উদ্দেশ্য। বড় পুজোগুলি এমনিই কিছু স্পনসর পায়, ছোট-মাঝারি পুজোর ক্ষেত্রে নিজেদের বিপণন বাজেট বাড়ানোর একটা কৌশলও। এই যুক্তি মেনে নিচ্ছেন উদ্যোক্তারাও। তাঁদের অনেকেই বলেন, ‘‘দর্শকদের সঙ্গে বড় সংস্থারাও আমাদের হোর্ডিং দেখে উদ্ধুদ্ধ হতে পারেন। গাঁটের কড়ি বাড়লে তো ভালই।’’ যদিও দর্শকই মূল এবং দর্শক এলে স্পনসর আসবে বলেও তাঁদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন