আদৌ কি চালু হবে, সংশয় জেসপ নিয়ে

তেরো বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি কারখানা। বিল বাকি থাকায় কেটে দেওয়া হয়েছে জল-বিদ্যুতের সংযোগ। রক্ষীরা নিয়মিত বেতন পান না বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫৮
Share:

বন্ধ কারখানা গেট। নিজস্ব চিত্র।

তেরো বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি কারখানা। বিল বাকি থাকায় কেটে দেওয়া হয়েছে জল-বিদ্যুতের সংযোগ। রক্ষীরা নিয়মিত বেতন পান না বলে অভিযোগ। দফায়-দফায় চুরি যাচ্ছে কারখানার যন্ত্রপাতি। দুর্গাপুরের জেসপ কারখানার ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে দমদমে জেসপ কারখানায় লাগাতার চুরি ও আগুন লাগার ঘটনায় অন্তর্ঘাতের অভিযোগ ওঠায় মালিক পবন রুইয়ার বিরুদ্ধে মামলা রুজু হওয়ায় দুর্গাপুরের কারখানাটি নিয়ে আশঙ্কা আরও বেড়েছে।

Advertisement

দুর্গাপুরে জেসপ কারখানা চালু হয় ১৯৫৮ সালে। রেলের বগি, রোলার, ফাউন্ড্রি, ক্রেন ইত্যাদি তৈরি হতো এই কারখানায়। এক সময়ে কর্মীদের ভিড়ে গমগম করত কারখানা। প্রায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিক-কর্মী ছিলেন। ১৯৭১ সালে কারখানাটি অধিগ্রহণ করে কেন্দ্রীয় সরকারের ভারী শিল্প মন্ত্রক। নয়ের দশকের প্রথম থেকে নানা কারণে রুগ্‌ণ হতে শুরু করে সংস্থাটি। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৯ সালে কারখানাটি পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৩ সালে ১৮ কোটি টাকার বিনিময়ে প্ল্যান্ট-সহ কারখানার ১১৭ একর জমি কিনে নেয় রুইয়া গোষ্ঠী। জানানো হয়, রেলের বগি এবং কাপলিং তৈরি করা হবে।

কিন্তু তার পরে এখনও পর্যন্ত উৎপাদন শুরুর কোনও উদ্যোগ নজরে আসেনি। উল্টে, ২০০৮ সালে জমির একাংশে আবাসন প্রকল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক গড়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে রুইয়া গোষ্ঠী কারখানার জমির চরিত্র বদলের আর্জি জানায় আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) কাছে। এডিডিএ সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেয়। জানিয়ে দেওয়া হয়, শিল্পের জন্য নেওয়া কারখানা ও জমিতে শিল্পই গড়তে হবে। সেখানে আবাসন বা অন্য কিছু করা যাবে না।

Advertisement

এ সবের মধ্যেই কারখানায় উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় যন্ত্রাংশ হাপিস করতে থাকে দুষ্কৃতীরা। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ ও জলের বিল বাকি থাকায় এক সময়ে সেগুলির সংযোগ ছিন্ন করে দেয় ডিপিএল। এখন কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রক্ষীরাও নিয়মিত বেতন পান না বলে অভিযোগ।

দমদমের জেসপ কারখানায় আগুন লাগার তদন্তে নেমে অন্তর্ঘাতের দিকেই ইঙ্গিত করেছে সিআই়ডি। যন্ত্রাংশ চুরি ও আগুন লাগার পিছনে কর্তৃপক্ষের হাত আছে বলে দাবি করেছেন সেখানকার শ্রমিক-কর্মীরাও। এর পরেই জেসপ মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দমকল ও পুলিশ। তদন্তে নেমেছে সিআইডি-ও। বছর তিনেক আগে ওয়াগন তৈরির জন্য রেল কর্তৃপক্ষ এই কারখানায় প্রায় ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেছিল। অভিযোগ, ওয়াগন বানানো হয়নি। যন্ত্রাংশও ফেরত দেননি কর্তৃপক্ষ। তার অধিকাংশই সরিয়ে ফেলেছে দুষ্কৃতীরা। যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনার তদন্তে নেমেই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। হুগলির সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানাতেও বারবার চুরির ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অতীতে দুর্গাপুরের জেসপ কারখানাতেও বারবার চুরির হয়েছে। অথচ, তা রুখতে কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তা কর্মীরা।

শহরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা সিটু নেতা বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী ২০০৮ সালে জেসপ কারখানা খোলার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কারখানা কর্তৃপক্ষকে তিনি চিঠি দিয়ে দ্রুত কারখানা খোলার আর্জি জানান। বিপ্রেন্দুবাবু দাবি করেন, ‘‘চিঠির উত্তরে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, সেই বছরের শেষ দিকে কারখানায় উৎপাদন শুরুর উদ্যোগ হয়েছে। কিন্তু তা হয়নি।” আইএনটিটিইউসি নেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায় আবার দাবি করেন, ‘‘ওই কারখানা খোলা সম্ভব কি না, তা না ভেবেই এক জনের হাতে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার পরেও কারখানা খোলার বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।’’ কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন