Coronavirus

করোনার থাবা রং ব্যবসায়

দুর্গাপুরের বেনাচিতি, মামরা, স্টেশন বাজারে গিয়ে দেখা গেল, নানা রং ও আবিরের পসার সাজিয়ে বিক্রেতারা থাকলেও নেই ক্রেতার দল।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২০ ০১:১৪
Share:

আবির ও রঙের পসরা। ক্রেতার দেখা নেই, আক্ষেপ ব্যবসায়ীদের। শনিবার দুর্গাপুরের মামড়া বাজারে। ছবি: বিকাশ মশান

রাত পোহালেই দোল। অথচ, রং-আবিরের দোকানে মাছি তাড়ানোর দশা। দুর্গাপুরের বিভিন্ন বাজারের দোকানদারের জানান, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কেই এই পরিস্থিতি। ফলে, দোলের আগের দিন আবির, রঙের বাজার কতটা উঠবে, তা নিয়েও সংশয়ে তাঁরা।

Advertisement

দুর্গাপুরের বেনাচিতি, মামরা, স্টেশন বাজারে গিয়ে দেখা গেল, নানা রং ও আবিরের পসার সাজিয়ে বিক্রেতারা থাকলেও নেই ক্রেতার দল। শনিবার বিকেল পর্যন্ত ১০ শতাংশও বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছেন তাঁরা। কেন এই হাল? করোনার থাবা এ দেশে না থাকায় প্রথমে দোকানদারেরা ফি বছরের মতোই রং, আবির কিনেছিলেন পাইকারি বাজার থেকে। কিন্তু গত কয়েক দিনে ভারতের নানা প্রান্তে করোনা আক্রান্ত রোগীর কথা সামনে আসতেই বিক্রি তলানিতে বলে দাবি ওই দোকানদারদের।

এই পরিস্থিতির জন্য ‘গুজব’-ও বেশ খানিকটা দায়ী বলে মনে করছেন দোকানদারদের একাংশ। বেনাচিতি বাজারের রং ও আবির বিক্রেতা বিকাশ দাস বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় রং বা আবিরের মাধ্যমেও না কি করোনা ছড়াতে পারে বলে প্রচার হচ্ছে। এটা তো গুজব। কিন্তু এর প্রভাবে আমাদের পেটে টান পড়ছে।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিক্রেতা জানান, অনেকেই এলাকায় বলছেন রং, আবির চিনে তৈরি! তাই ওতে হাত দেওয়া যাবে না। ওই বিক্রেতাদের আক্ষেপ, ‘‘বলেও বোঝানো যাচ্ছে না, এ সব কলকাতা থেকে এনেছি। দেশের সংস্থা তৈরি করেছে রং, আবির।’’

Advertisement

তবে ক্রেতাদের একাংশের দাবি, বাজারের পিচকারির গায়ে চিনে তৈরির ছাপ নজরে পড়েছে। বিক্রিতে কেমন প্রভাব পড়ছে, তা জানান দোকানদার রিণ্টু ব্রহ্ম। তাঁর দাবি, ‘‘প্রতি বছর দোলে প্রায় ৫০ বস্তা আবির বিক্রি হয়। এ বার শনিবার পর্যন্ত এক বস্তাও পুরো বিক্রি করতে পারিনি। দোলের আগের দিন, রবিবার আর কতই বা আবির বিক্রি হবে!’’

রঙে করোনা-আতঙ্কের রেশ পাওয়া গেল প্রতি বছর দোল পালন করে, এমন কিছু সংগঠন, সংস্থা বা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেও। অনেকেই রং, আবির ছাড়া উৎসব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন। কুমারমঙ্গলম পার্কে বছরের পরে বছর ধরে দোল উৎসবের আয়োজন করে আসছেন এএসপি-র প্রাক্তন কর্মী রণজিৎ গুহ ও তাঁর স্ত্রী মধুমিতাদেবী। রণজিৎবাবু বলেন, ‘‘ভেষজ আবির থাকছে। আর থাকছে বেশ কয়েক কেজি ফুলের পাপড়ি। ভেষজ আবির আর ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে উৎসব হবে। যে কোনও রং বা সাধারণ আবির বাদ।’’ বসন্ত উৎসবের আমন্ত্রণপত্রে ‘কোনও প্রকার রং এবং আবির ব্যবহার করা হবে না’ বলে উল্লেখ করেছে ‘দুর্গাপুর কয়্যার’ নামে একটি সংস্থা। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পরিমল দাস বলেন, ‘‘এ বারের পরিস্থিতি আলাদা। অনেকেই কেমন যেন সংশয়ে রয়েছেন। তাই এই পথ নিতে হয়েছে।’’

যদিও দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাসের পরামর্শ, হাতের ছোঁয়া থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে জনবহুল জায়গায় গিয়ে অনেকের সঙ্গে রং খেলায় মেতে না ওঠাই ভাল। তবে চিনা রং বা আবিরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি, সেটা নেহাতই গুজব। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের কেউ কেউ আবার দোকানে-দোকানে ঘুরে দেশীয় সংস্থার তৈরি ভেষজ আবিরের খোঁজ করছেন। কিন্তু সেই সংখ্যাটাও অল্পই, বলছেন দোকানিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন