প্রতীকী ছবি।
সকলের পরস্পরের অপরিচিত। হাতে কোনও কাজও নেই। সেই সঙ্গে অনেকের মধ্যে কাজ করছে ভবিষ্যতে কাজ মেলা নিয়ে চিন্তাও। জেলার নানা ‘কোয়রান্টিন’ বা নিভৃতবাস কেন্দ্রের আবাসিকদের অনেকের মধ্যে তাই রাগ, অবসাদ, হতাশার নানা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, জানাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। সে কারণে মনোবিদদের সাহায্যে তাঁদের নিয়মিত ‘কাউন্সেলিং’ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
জেলার ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুনেত্রা মজুমদার বলেন, ‘‘কোয়রান্টিনে থাকা মানুষজন যাতে এই পরিস্থিতিতে ভেঙে না পড়েন, সে জন্য কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে। মনোবিদদের দিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’
বর্ধমানে কৃষি দফতরের নতুন ভবনে এবং কালনা আরএমসি ভবনের ভিতর জেলার দু’টি নিভৃতবাস কেন্দ্র চলছে। দু’টি কেন্দ্রে মোট ২২২ জন রয়েছেন। তাঁরা যাতে স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে না ফেলেন, নেশার দ্রব্য থেকে দূরে থাকেন, সে সবের জন্য নিয়মিত ‘কাউন্সেলিং’-এর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ দল নজরবন্দি আবাসিকদের প্রতিদিন শারীরিক পরীক্ষা করছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, কোয়রান্টিন কেন্দ্রে থাকা মানুষজনের আচরণে বিচলিত না হয়ে কী ভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি সামলাতে হবে, বিভিন্ন ব্লকের কাউন্সেলরদের সে নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের দাবি, বর্ধমানের নিভৃতবাস কেন্দ্রে থাকা আবাসিকদের কেউ-কেউ নানা সমস্যা তৈরি করছেন। তাঁদের চাহিদা মেটাতে নাজেহাল হতে হচ্ছে। জলের পাইপ, পরিস্রুত জলের যন্ত্র ভাঙা পড়ছে। অনেকে আবার নেশার জিনিস এনে দেওয়ার জন্য সিভিক ভলান্টিয়ারদের ‘চাপ’ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। অনেকে আবার নালিশ করছেন, এই কেন্দ্রে ঠাসাঠাসি করে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। যদিও এ সব মানতে চাননি প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের ধারণা, বাড়ি ফেরার জন্য নানা বাহানা করছেন ওই আবাসিকেরা।
আধিকারিকেরা মনে করছেন, ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরার পরে পরিবার-পরিজন ছেড়ে অপরিচিতদের সঙ্গে টানা থাকতে হওয়ায় অনেকে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছেন। তাই নানা অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাঁদের যোগ, মেডিটেশন করে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। মনোবিদ ইন্দ্রাণী দত্তের কথায়, ‘‘বাড়ি থেকে, সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হলে অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। মনোবিদেরা স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গে তাল মেলাতে সাহায্য করতে পারবেন।’’
ডেপুটি সিএমওএইচ (২) বলেন, ‘‘পরিকাঠামোগত সমস্যা থাকলেও ঠাসাঠাসি করে থাকার পরিবেশ নেই। আমি পর্যবেক্ষণ করেছি। বরং, কেউ-কেউ নানা সমস্যা তৈরি করছেন। তাই কাউন্সেলিং করানো হচ্ছে।’’