Coronavirus

‘মাস্ক’ নেই ডাক্তারদেরও

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, দু’দিন আগেও ৬০ জন ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ ছিলেন এ জেলায়। বুধবার দুপুরে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২০ জনে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২০ ০১:১৮
Share:

এই ভবনকেই কোয়রান্টিন কেন্দ্র হিসাবে তৈরি করা হচ্ছে। ছবি: উদিত সিংহ

নির্মীয়মাণ জেলা কৃষি ভবনে ১৩৮ শয্যার ‘কোয়রান্টিন’ কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল সোমবার। ৭২ ঘণ্টা পরেও বর্ধমান শহরের সাধনপুরের ওই ভবনের অবস্থা তথৈবচ। বুধবার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায়ের নেতৃত্বে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক হয়। সেখানে ‘কোয়রান্টিন’ কেন্দ্রর পরিকাঠামো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কাটোয়া ও কালনা মহকুমা হাসপাতালের আইসোলেশন’ বিভাগের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, দু’দিন আগেও ৬০ জন ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ ছিলেন এ জেলায়। বুধবার দুপুরে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২০ জনে। এর মধ্যে হায়দরাবাদ থেকে তিন মহিলা, তিন শিশুকন্যাকে নিয়ে সপ্তাহ খানেক আগে শক্তিগড় থানার তাঁতখণ্ডে ফেরেন। জ্বর-সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে বর্ধমান ২ ব্লকের বড়শুল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ দিন চিকিৎসার জন্য যান তাঁরা। তাঁদের অ্যাম্বুল্যান্সে করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, তিনটি শিশুই সাধারণ সর্দি-কাশি রয়েছে। শিশু বিভাগে ভর্তি তারা। বিএমওএইচ (বর্ধমান ২) ন্যায় অভিষেক যশ বলেন, “ওই রোগীরা জ্বর, সর্দি, কাশি, গায়ে ব্যথা নিয়ে গ্রামে ছিলেন। আশাকর্মীরা তাঁদের হাসপাতালে পাঠান। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসার পরে, বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠিয়েছি।’’

এই পরিস্থিতিতে ‘মাস্ক’-এর আকাল দেখা গিয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরেই। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ, কালনা ও কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের দাবি, “আমাদের পক্ষে তো দূরে থাকা সম্ভব নয়। রোগীর সংস্পর্শেই সব সময় থাকতে হচ্ছে। মাস্ক চেয়ে দরবার করছি। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না।’’ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের এক চিকিৎসকের কথায়, “সব রোগীই ভাবছেন, তাঁর বুঝি করোনা হয়েছে। আতঙ্কের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। মাস্ক থাকলে আমরাও সুরক্ষিত ভাবে কাজ করতে পারি।’’ অনেক চিকিৎসকই বাইরে থেকে ‘ট্রিপল লেয়ার সার্জিক্যাল’ মাস্ক কিনে হাসপাতালে ঢুকছেন।

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ১০ হাজার ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর ৪০ হাজার ‘মাস্ক’ চেয়ে রাজ্যে চিঠি পাঠিয়েছে। তার মধ্যে পাঁচ হাজারের মতো ‘ট্রিপল লেয়ার সার্জিক্যাল মাস্ক’-এর বরাত দেওয়া হয়েছিল। জানা যাচ্ছে, তার জায়গায় রাজ্য থেকে ৬০-৭০টির মতো ওই ‘মাস্ক’ মিলতে পারে বলে জানানো হয়েছে। সাধারণ ‘মাস্ক’ও অমিল বলে রাজ্য থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। রাজ্য থেকে জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র শিল্প দফতর থেকে রাজ্যের পাঁচটি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের বন্দিদের প্রায় আড়াই লক্ষ ‘মাস্ক’ তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছে। দমদম, প্রেসিডেন্সি, জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের বন্দিরা প্রশিক্ষণ নিয়ে বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে ‘মাস্ক’ তৈরির কাজ শুরু করেছেন। জোগান বাড়লেই জেলায় ‘মাস্ক’ পাঠানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

এ দিন সন্ধ্যায় জেলার ‘কোয়রান্টিন’ কেন্দ্রের পরিকাঠামো নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, ১৩৮টি শয্যা থাকবে। নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট দূরত্বে শয্যাগুলি রাখা হবে। কিন্তু জেলা কৃষি ভবনে এখনও পর্যাপ্ত আলো, শৌচাগার, জলের ব্যবস্থাই হয়নি। স্বাস্থ্য-কর্তারা জানান, যে কোনও সময় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে। নার্স, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ‘ট্রিপল লেয়ার সার্জিক্যাল মাস্ক’ পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রাখার কথা বলা হয়েছে। রোগীদের জন্য ‘এন ৯৫ মাস্ক’ও রাখার কথা বলা হয়েছে। এর সঙ্গেই যথেষ্ট পরিমাণে ‘পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট’ (পিপিই) মজুত রাখার বিষয়টিও বৈঠকে উঠে এসেছে।

এ দিন কৃষি ভবনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো ভবন ধুলোয় ভর্তি। চারিদিকে নির্মাণ সামগ্রী, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। পাইপ লাইনে জল সরবরাহ ব্যবস্থা এখনও ঠিক হয়নি। সিএমওএইচ বলেন, “হাসপাতালগুলি নিয়ে সমস্যা নেই। প্রস্তাবিত কোয়রান্টিন কেন্দ্র নিয়ে কিছু সমস্যার কথা উঠে এসেছে। পূর্ত দফতরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’’ প্রস্তাবিত ‘কোয়রান্টিন’ কেন্দ্রে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা নিয়েও আলোচনা হয়েছে, জানান তিনি। দু’-এক দিনের মধ্যে কেন্দ্রটি চালু করারও চেষ্টা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন