চেয়ারে ভর রেখেই মানুষের পাশে আন্নারানি মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।
সঞ্চিত অর্থ দিয়ে খাদ্যসামগ্রী কিনে তা গ্রামের প্রায় পাঁচশো পরিবারকে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন বিশেষ ভাবে সক্ষম, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বছর ৬৩-র আন্নারানি মণ্ডল। অণ্ডালের দক্ষিণখণ্ড গ্রামের ঘটনা।
দক্ষিণখণ্ডের বাদ্যকরপাড়ায় ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন অকৃতদার এই শিক্ষিকা। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আন্নারানিদেবী শরীর ভাঁজ করতে পারেন না কোনও দিনই। জন্ম থেকেই তিনি আশি শতাংশ প্রতিবন্ধী।
দক্ষিণখণ্ড রাধারানি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন আন্নারানিদেবী। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে ‘লকডাউন’ জারি হওয়ার পরে থেকেই ভাবছিলেন এলাকার মানুষের জন্য যদি কিছু করা যায়, বলছিলেন চেয়ারে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আন্নারানিদেবী।
কিন্তু কেন এমন ভাবনা? আন্নারানিদেবী বলেন, ‘‘সঞ্চিত টাকার কিছুটা যদি দেশের এই অসময়ে মানুষের কাজে লাগে, তা হলে মরেও শান্তি পাব। নিজে সব কাজ করতে পারি না। বাড়ির সদস্যেরা ও পড়শিরা এই কাজে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আপাতত সব পরিবারকে এক বার করে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাঁরা অসুবিধায় পড়লে ফের খাবার পৌঁছে দেব।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওই কাজে এ পর্যন্ত লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে।’’
গত ১ এপ্রিল থেকে শনিবার পর্যন্ত বাদ্যকরপাড়া, বাউড়িপাড়া, বাগদিপাড়া ও মধ্যপাড়ার প্রায় পাঁচশো বাসিন্দার বাড়ি-বাড়ি চার কেজি করে চাল, দু’কেজি করে আলু, দু’শো গ্রাম সর্ষের তেল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই শিক্ষিকা। এই কাজে তাঁর পাশে দাঁড়ান পরিবারের সদস্য বন্দনা মণ্ডল, পার্থ ঘোষ, শ্রীকান্ত মণ্ডল, আস্তিক মণ্ডলেরা। জিনিসপত্র জোগাড় করে তা প্যাকেটজাত করেন পরিবারের সদস্যেরা ও পড়শি ঠাণ্ডা বাদ্যকর, ফুলেশ্বরী বাদ্যকর প্রমুখ। তার পরে তা বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়।
আন্নারানিদেবীর জন্য গর্বিত তাঁরা, জানান বাড়ির সদস্য ও পড়শিরা। এই কাজকে স্বাগত জানিয়েছেন খাদ্যসামগ্রী পাওয়া গ্রামবাসীও। বাউড়িপাড়ার জগন্নাথ বাউড়ি, হংস বাদ্যকরেরা বলেন, ‘‘আন্নাদি’র শিক্ষক হিসেবে খুবই সুনাম ছিল। অসময়ে উনি আমাদের সবার পাশে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে তিনি যেন শিক্ষকের বৃহত্তর ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দিলেন।’’
শিক্ষিকার এই কাজকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসনও। দক্ষিণখণ্ড পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান অনন্ত ঘোষ বলেন, “আন্নারানিদেবী দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আমাদের সবার মাথা উঁচু করে দিয়েছেন।’’ বিডিও (অণ্ডাল) ঋত্বিক হাজরা বলেন, “আন্নারানিদেবীর এই কাজ খুবই প্রশংসনীয়। আমি তাঁকে ফোন করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এই কাজ করার জন্য অনুরোধ করেছি।’’ তবে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত লোকজন জানান, করোনা-সতর্কতায় উপযুক্ত দূরত্ব মেনেই যাবতীয় কর্মকাণ্ড চলছে।