রাস্তার পাশেই রান্নার আয়োজন। ছবি: সুপ্রকাশ চৌধুরী
‘লকডাউন’-এ সাধারণ মানুষ ঘরবন্দি। কিন্তু সমস্যায় রয়েছেন বাইরে বেরিয়ে আটকে পড়া মানুষজন। বিভিন্ন ‘কোয়রান্টিন’ কেন্দ্রে রয়েছেন নানা রাজ্য, জেলার শ্রমিকেরা। আবার যে সমস্ত ট্রাক চালকেরা পণ্য নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন, তাঁরা আটকে পড়েছেন রাস্তাতেই। জাতীয় সড়কের ধারে ইতিউতি দেখা যাচ্ছে সেই সমস্ত চালক, খালাসিদের। রাস্তাতেই রান্নার তোড়জোড় করছেন কেউ, কারও দিন কাটছে শুকনো খাবারে।
বর্ধমানে দু’নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে ট্রাকের পার্কিং জ়োন। ফাগুপুর, নবাবহাট, শক্তিগড়ে জাতীয় সড়কের দুই লেনেই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ট্রাক। চালকেরা জানান, তাঁরা কেউ রাজস্থান, কেউ গুজরাত থেকে ট্রাক নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন। ‘লকডাউন’ জারি হওয়ায় পথেই আটকে গিয়েছেন। আলিশা এবং নবাবহাট বাসস্ট্যান্ডেও আটকে রয়েছেন অনেকে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নবাবহাট বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া গুরুদ্বার থেকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে ওই চালকদের।
ফাগুপুরে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে গাছের তলায় বসে রয়েছেন এক ট্রাকচালক। তাঁর নাম লালবাবু রাম। বাড়ি রাজস্থানে। তিনি জানান, গুজরাত থেকে জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়েছিলেন ‘লকডাউন’-এর দিন কয়েক আগে। গন্তব্য ছিল খিদিরপুর ডক। কিন্তু আপাতত ফাগুপুরেই ট্রাক নিয়ে আটকে আছেন তিনি। সঙ্গে থাকা আটা আর আলু দিয়ে খাবার বানিয়েই পেট ভরছে তাঁর। লালবাবু জানান, ট্রাকে জিনিসপত্র থাকায় অন্য কোথায় যেতেও পারছেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে থাকা খালাসি লকডাউনের খবর পেয়ে মাঝপথেই নেমে যায়। তার পর থেকে একাই আছি।’’
একই ভাবে আটকে রয়েছেন আর এক চালক অশোক শর্মা। একটি বেসরকারি সংস্থার মালপত্র বিহার থেকে কলকাতা নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। শক্তিগড়ে রয়েছেন বারাণসীর বাসিন্দা মোহন রাওয়াত। তাঁর দাবি, রাজস্থান থেকে চুন নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। আটকে পড়েছেন বর্ধমানে। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আর এক চালক ইকবাল শেখও। মোহনবাবু বলেন, ‘‘মাঠ পেরিয়ে গ্রামের ভিতর থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে আনছেন তাঁরা। তারপরে স্টোভে রান্না করে চলছে খাওয়া দাওয়া।’’
কাজিরহাট, নবাবহাট, রথতলা এলাকাতেও আটকে রয়েছে বেশ কিছু পণ্যবাহী গাড়ি। কষ্টেই দিন কাটছে তাঁদের। ওই চালকদের আক্ষেপ, শহরের মধ্যে অনেক সংগঠন সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ালেও, তাঁরা কোনও সাহায্য পাননি। পকেটের টাকাও ফুরিয়ে আসছে। সাহায্য না পেলে আধপেটা খেয়ে দিন কাটাতে হবে বলেও তাঁদের আশঙ্কা।
জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘স্থানীয় ভাবে এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওই চালকদের সাহায্য করেছেন বলে শুনেছি। যদি তাঁরা ত্রাণ না পেয়ে থাকেন বা যদি অসুবিধা হয়, সে ক্ষেত্রে প্রশাসন সাহায্য করবে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি পার্কিং লট শক্তিগড় থানা এবং অন্যটি বর্ধমান থানার মধ্যে পড়ে। দুই থানার আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, বিষয়টি জানেন তাঁরা। সব রকম সহযোগিতা করা হবে।