Coronavirus

‘পরিযায়ী’ শ্রমিকদের পৃথক কেন্দ্র

রবিবার বিকেলে রাজ্যের মুখ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পরে, জেলার সমস্ত সীমানা ‘সিল’ করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। সন্ধ্যার পর থেকেই জামালপুর, গলসি, কাটোয়া, কালনা, মেমারি, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, নাদনঘাট-সহ সব থানা এলাকার জেলা-সীমান্তবর্তী এলাকায় নাকা-তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২০ ০৬:১৬
Share:

প্রতীকী ছবি

ভিন্‌ জেলা বা রাজ্যের ‘পরিযায়ী’ শ্রমিকদের আটকাতে তৎপর হয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। শুধু পরিযায়ী শ্রমিক নন, অন্য জেলা থেকে কেউ ঢুকলে তাঁদেরও ‘অস্থায়ী কোয়রান্টিন’-এ থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পরামর্শ না মানলে তাঁদের অন্তত ১৪ দিন ‘কোয়রান্টিন’ কেন্দ্রে রাখার কথাও বলা হয়েছে। এই সময়ে ভাড়া চেয়ে শ্রমিক বা পড়ুয়াদের বিরক্ত করলে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছে জেলা পুলিশ।

Advertisement

রবিবার বিকেলে রাজ্যের মুখ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পরে, জেলার সমস্ত সীমানা ‘সিল’ করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। সন্ধ্যার পর থেকেই জামালপুর, গলসি, কাটোয়া, কালনা, মেমারি, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, নাদনঘাট-সহ সব থানা এলাকার জেলা-সীমান্তবর্তী এলাকায় নাকা-তল্লাশি শুরু করে পুলিশ।

সোমবার বিকেল পর্যন্ত জামালপুর থানাতেই প্রায় চারশো জনকে আটক করা হয়। জৌগ্রামের কাছে একটি স্কুলে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধান মেনে ‘কোয়রান্টিন’-এ রাখা হয় তাঁদের। এ ছাড়া, জেলার সব থানাতেই এক-দু’টি স্কুলে পৃথক শিবির করে ওই শ্রমিকদের রাখা হয়েছে। কাটোয়ার নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতিতে কয়েকদিন ধরে বিহারের ১৩৪ জন রয়েছেন। ‘লকডাউন’ উঠলেই তাঁদের বাসে করে বিহারের ভাগলপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেন।

Advertisement

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জামালপুরে আটক থাকা বেশির ভাগ শ্রমিকই বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তীসগঢ়ের বাসিন্দা। দুই চব্বিশ পরগনা, কলকাতা, মেদিনীপুর থেকে ফিরছিলেন তাঁরা। জৌগ্রামে তল্লাশি চলছে খবর পেয়ে শ্রমিকদের হুগলির চন্দনপুর এলাকায় নামিয়ে দেয় গাড়ি। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে রাতভর হেঁটে জামালপুরে পৌঁছন তাঁরা। সেখানে আটকে দেয় পুলিশ। আবার অনেকে মাঠ দিয়ে, দামোদর পার হয়ে জামালপুর, রায়না দিয়ে বর্ধমান শহরে ঢোকার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। তাঁদেরও জামালপুর থানা আটকায়।

জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, ব্যান্ডেল, উত্তরপাড়া থেকে ট্রেন লাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে ৪০ জনের একটি দল মেমারি পৌঁছয়। তাঁদের অনেকেই মুর্শিদাবাদ, বীরভূমে যেতেন। মেমারি থানা তাঁদের আটকে একটি স্কুলে নিয়ে গিয়ে তুলেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দলের অনেকই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কারও কারও পা ফেটে, কেটে রক্ত বার হচ্ছিল। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়েছে। কোলাঘাট থেকে ২১ জনের একটি দল হেঁটে মুর্শিদাবাদ যাচ্ছিলেন। তাঁদেরও পুলিশ আটকে দিয়েছে।

জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “কয়েক ঘণ্টায় জেলায় আটশোরও বেশি পরিযায়ী শ্রমিককে আটকে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।’’ জানা গিয়েছে, তাঁদের দেখভালের জন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে কাজে লাগানোর কথা ভাবা হচ্ছে। খাবারের ব্যবস্থাও করছে প্রশাসন ও পুলিশ। এ ছাড়া, ভিন্‌ জেলা থেকে যাঁরা ঢুকতে চাইছেন তাঁদের বিরুদ্ধেও কড়া হচ্ছে জেলা প্রশাসন। ঠিক হয়েছে, কোনও রকম অনুমোদন ছাড়া, গাড়ি নিয়ে কোনও ব্যক্তি বা পরিবার জেলায় ঢুকলে তাঁদের আটকে সরাসরি ‘অস্থায়ী কোয়রান্টিন’-এ রাখা হবে। ১৪ দিন পরে ছাড়া হবে। যে কোনও রকমে যাতায়াত বন্ধ রাখতেই জেলা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত। তবে প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, “পুলিশকে প্রত্যেকটি ঘটনা আলাদা ভাবে বিচার করতে বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন