বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমিতে চাষ, শঙ্কিত এনটিপিসি

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে জমি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতি বছরই সেই জমিতে চাষ করে আসছেন কিছু চাষি। এত দিন এ নিয়ে আপত্তি না করলেও, এ বার বিহিত চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হল এনটিপিসি। জমি জটে দীর্ঘদিন থমকে থাকার পরে এই সবে বর্ধমানের কাটোয়ায় প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চাকা দ্রুত গড়াতে শুরু করেছে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৪ ০১:৫২
Share:

এনটিপিসি-র জমিতে চাষের প্রস্তুতি। অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে জমি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতি বছরই সেই জমিতে চাষ করে আসছেন কিছু চাষি। এত দিন এ নিয়ে আপত্তি না করলেও, এ বার বিহিত চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হল এনটিপিসি।

Advertisement

জমি জটে দীর্ঘদিন থমকে থাকার পরে এই সবে বর্ধমানের কাটোয়ায় প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চাকা দ্রুত গড়াতে শুরু করেছে। গত জুনেই সংস্থার চেয়ারম্যান অরূপ রায়চৌধুরী এসে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা সেপ্টেম্বর থেকে নির্মাণকাজ শুরু করতে চান। প্রকল্প এলাকার যে সব জায়গা এখনও ঘেরা নেই, তা দ্রুত ঘিরে ফেলার নির্দেশও দিয়ে গিয়েছেন তিনি। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার ঘেরার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও মঞ্জুর হয়ে গিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে কিছু চাষি মাঠে বীজ ফেলতে শুরু করায় এনটিপিসি কর্তারা শঙ্কিত। সংস্থার অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার শিবাশিস বসু কাটোয়ার মহকুমাশাসকের কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, দেবকুন্ডু মৌজার দিকে কয়েক জন জমিমালিক অধিগৃহীত এলাকায় চাষের জমি তৈরি করে বীজ ফেলতে শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন হস্তক্ষেপ না করলে অন্য জমিমালিকেরাও খরিফ চাষ শুরু করে দিতে পারেন বলে তাঁদের আশঙ্কা। তাতে জমি ঘেরা বা নির্মাণের কাজ শুরু করা নিয়ে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হতে পারে।

Advertisement

চিঠি পেয়েই ১৬ জুলাই, বুধবার ওই সব জমির মালিক, পুলিশকর্তা, ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার। শনিবার তিনি বলেন, “ওই দিন জমির মালিক কাছে জানতে চাওয়া হবে, কেন তাঁরা অধিগৃহীত জমিতে চাষ করছেন? তাঁদের বক্তব্য শোনার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।”

কাটোয়ায় ১৩২০ মেগাওয়াটের (৬৬০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট) তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে এখন ২২০ একর জমি কেনার তোড়জোড় চালাচ্ছে এনটিপিসি। ৫৫৬ একর জমি বিগত বাম আমলেই অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। তার পুরোটা এখনও পাঁচিল দিয়ে ঘেরা নেই। ২০০৫-এ জমি অধিগৃহীত হলেও, চাষের কাজে বাধা দেওয়া হয়নি। জমিমালিকেরা আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিয়েও গত বছর পর্যন্ত দিব্যি খরিফ চাষ করে গিয়েছেন। সেই অধিগৃহীত জমির একাংশেই এ বার ফের বীজ ফেলা হয়েছে।

কিন্তু সেপ্টেম্বর থেকে কাজ শুরু করবে বলে এনটিপিসি যখন জানিয়ে দিয়েছে এবং সে কারণে চাষ করতে নিষেধ করেছে, সব জেনেশুনে চাষিরা বীজ ফেলছেন কোন আক্কেলে?

স্থানীয় শ্রীখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দীপক মজুমদার বলেন, “আমি নিজে ওই চাষিদের কাছে গিয়ে বুঝিয়েছি। তাঁদের দাবি, তাঁরা এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি, সেই কারণেই চাষ করছেন।”

জেলা ভূমি অধিগ্রহণ দফতর সূত্রে খবর, অধিগ্রহণের সময়ে কয়েক জন জমিমালিকের নথিপত্রে গোলমাল থাকায় ক্ষতিপূরণ নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তা মেটাতে ইতিমধ্যেই প্রকল্প এলাকায় এনটিপিসি অফিসে জমির মালিকদের ডেকে কথা বলা হয়েছে। বুধবার মহকুমাশাসকের ডাকা বৈঠকে স্থায়ী সমাধান হয়ে যাবে বলে প্রশাসন আশাবাদী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন