ফণী-হামলায় কমই ক্ষতি

গত কয়েক বছরে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে বারবার ফসলে ক্ষতি হয়েছে। ‘ফণী’ ধেয়ে আসার খবরে তাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন জেলার চাষিরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৯ ০৩:৩৯
Share:

ধানের জমিতে জমেছে জল। শনিবার সকালে গলসির রামপুর গ্রামে। ছবি: কাজল মির্জা

ধানের জমিতে জল জমেছে। বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন কয়েকটি এলাকার কিছু বাসিন্দা। তবে জেলায় ‘ফণী’ সে ভাবে ছোবল দিতে পারেনি বলে জানাল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন।

Advertisement

গত কয়েক বছরে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে বারবার ফসলে ক্ষতি হয়েছে। ‘ফণী’ ধেয়ে আসার খবরে তাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন জেলার চাষিরা। মাঠে পাকা বোরো ধানের ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করছিলেন তাঁরা। অনেকে তড়িঘড়ি ধান তুলতেও শুরু করেন। শনিবার জেলা প্রশাসন অবশ্য জানায়, আউশগ্রাম ১ ব্লক ছাড়া অন্য এলাকায় তেমন ভারী বৃষ্টি হয়নি। চাষের জমিতে যে জল জমেছে তা রোদ উঠলেই শুকিয়ে যাবে। তাই চাষে ক্ষতির সম্ভাবনা খুব কম। শুধু আবহাওয়া কয়েকদিন মেঘলা থাকলে কিছু ফসল নষ্টের সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি-কর্তারা মনে করছেন। জেলার উপ-কৃষি আধিকারিক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘জেলায় বৃষ্টিপাত তুলনামূলক কম হয়েছে। ফসলে কোনও ক্ষতি হবে না। তিল চাষে সুবিধা হতে পারে।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেল পর্যন্ত পাওয়া রিপোর্টে, জেলায় ৫২টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরও কিছু বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চাষিরা জানান, মাস দুয়েক আগে হঠাৎ বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আলু ও পেঁয়াজ চাষ। ভোট ঘোষণার আগে ক্ষতিগ্রস্ত মৌজার নোটিফিকেশন জারি করে জেলা প্রশাসন। সপ্তাহ দুয়েক আসে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে কিছু এলাকায় ধান চাষে ক্ষতি হয়। ধাক্কা খায় আম, লিচুর মতো ফল চাষও। এ বার চাষিরা যখন ধান কাটার প্রস্তুতি শুরু করছেন, তখনই ‘ফণী’র খবর মেলে। কৃষি দফতরের তরফে ফসল বাঁচাতে কী করণীয়, তা প্রচারও করা হয়।

Advertisement

চাষিদের দাবি, কৃষি দফতর সতর্ক করলেও হাতে তেমন সময় না পাওয়ায় মাঠেই ফেলে রাখতে হয়েছিল ফসল। মন্তেশ্বরের চাষি প্রদীপ ঘোষের কথায়, ‘‘শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি নামে। রাতে হাওয়াও বইছিল। মাঠে পাকা ধান। আরও ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কায় সারা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি। কিন্তু সকালে মাঠে গিয়ে দেখি, কিছু ধান ঝরে যাওয়া ছাড়া তেমন ক্ষতি হয়নি।’’ পূর্বস্থলীতে অনেক চাষি মাচায় আনাজ চাষ করেন। কালেখাঁতলার চাষি বিবেক দেবনাথ বলেন, ‘‘বড় ঝড় হলে সমস্ত মাচা ভেঙে যেত। বড় লোকসান হত। কিন্তু ঝড় আমাদের এলাকায় সে ভাবে হওয়ায় এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম মনে হচ্ছে।’’ জেলার অন্যতম সহ-কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষের দাবি, ‘‘ফণীর জেরে যে বৃষ্টি হয়েছে তা মাঠে থাকা পাট, তিল, আনাজ চাষে কাজে আসবে।’’ উদ্যানপালন বিভাগ জানায়, এই বৃষ্টি আম, লিচু চাষেও সহায়ক হবে।

ঝড়-বৃষ্টিতে জেলায় কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ। কাটোয়ার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে অজয়ের বাঁধের ধারের ৫৮ জন বাসিন্দা শুক্রবার রাতে স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে ছিলেন। এ দিন সকালে তাঁরা বাড়ি ফিরে যান। গলসির সাঁকো অঞ্চলের শশঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা শেখ নুরুল হুদা, সুরোজ মাঝিদের দাবি, ‘‘রাতে জোরে বৃষ্টি হওয়ার সময়ে বাড়ির একাংশ ধসে পড়েছে।’’ ক্ষতির হাল দেখতে শনিবার গলসি ২ ব্লকে যান জেলা পরিষদ সভাধিপতি শম্পা ধাড়া। শশঙ্গা গ্রামে পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সভাধিপতির আশ্বাস, ‘‘ফণীর জেরে জেলায় কী ক্ষতি হয়েছে, সেই রিপোর্ট তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন