দিদির কথায় ভরসা পেলেন ডালিমের স্ত্রী

খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মূল অভিযুক্ত রহমতুল্লা ও বিকাশ ফেরার। এ দিনও পূর্বস্থলীর খড়দত্তপাড়া ও কাটোয়ার নতুনগ্রাম থেকেও দু’জনকে ধরেছে পুলিশ। ধৃত দুজন ‘প্রভাবশালী’ এক নেতার ঘনিষ্ট বলেও জানা যাচ্ছে।

Advertisement

সুচন্দ্র দে

কাটোয়া শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৭ ০২:২৫
Share:

শোকার্ত পরিবার।— ফাইল চিত্র।

স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে টিভির সুইচে হাত দেননি। তবে মুখ্যমন্ত্রী জেলায় আসছেন শোনার পর থেকেই আশা ছিল, ‘দিদি নিশ্চয় স্বামীর খুনির শাস্তির কথা বলবেন!’ নিজে না গেলেও দেওর,ভাসুরদের বর্ধমানে পাঠিয়ে শিমুলিয়ার বাড়িতে বসে তাঁদের ফোনের অপেক্ষায় ছিলেন। ফোন পেয়ে চোখের জল বাঁধ মানল না বছর বত্রিশের লাভলি বিবির। কান্না জড়ানো গলায় বললেন, ‘‘দিদি যখন সঙ্গে আছেন,তখন বুকে বল আছে।’’

Advertisement

বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমানের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে মঙ্গলকোটে একটা খুন হয়েছে। মঙ্গলকোটের আইসিকে বলছি, প্রকৃত খুনিদের ছাড়া যাবে না। এলাকায় যাতে শান্তি থাকে দেখবেন।’’ সপ্তাহখানেক আগেই মঙ্গলকোটের নিগনে মাছের আড়তে বসে থাকার সময় গুলিতে খুন হন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি তথা শিমুলিয়ার ১ পঞ্চায়েত সদস্য সানাউল্লা শেখ ওরফে ডালিম। মাথার দু’পাশে দুটি গুলি লাগে তাঁর। ঘটনার পরের দিনই লাভলি বিবি অভিযোগ করেন, ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন আমার স্বামী। তাই বিধায়ক গোষ্ঠীর বেশ কিছুজন ওঁকে সরিয়ে দিল।’’ স্থানীয় বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর ভাই রহমতুল্লা চৌধুরী ও জেলাপরিষদের সদস্য বিকাশ চৌধুরী সহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন নিহতের দাদা আসাদুল্লা শেখ। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে খুনের ইঙ্গিত মিলেছিল অপূর্ববাবুর কথাতেও। নিহতের বাড়িতে এসে তৃণমূল সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ও বলেছিলেন, যত প্রভাবশালীই হোন না কেন, খুনে জড়িত থাকলে শাস্তি হবে। সেই বার্তা শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেও।

পুলিশ জানায়, খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মূল অভিযুক্ত রহমতুল্লা ও বিকাশ ফেরার। এ দিনও পূর্বস্থলীর খড়দত্তপাড়া ও কাটোয়ার নতুনগ্রাম থেকেও দু’জনকে ধরেছে পুলিশ। ধৃত দুজন ‘প্রভাবশালী’ এক নেতার ঘনিষ্ট বলেও জানা যাচ্ছে। পুলিশের দাবি, তদন্তের স্বার্থে এখনই ধৃতদের নাম জানানো যাবে না। তবে ঘটনার দিন পূর্বস্থলীর ওই বাসিন্দা গুলি চালিয়েছিল বলে পুলিশের অনুমান। খুনের সুপারি দিয়েছিল নতুনগ্রামের ওই ধৃত।

Advertisement

এ দিনের বৈঠক শেষে বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, ‘‘মঙ্গলবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মঙ্গলকোটের পরিস্থিতি বলেছি। উনি সন্তুষ্ট।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বর্ধমান জেলা পুলিশে যে ঘুণ ধরেছে তা বোঝা গেল। বর্ধমানে শেষ কথা বলবে প্রশাসন।’’ বিধায়কের আরও দাবি, ‘‘যে যতই হম্বিতম্বি করুক, এফআইআরে যার নাম থাকুক, প্রকৃত অপরাধী যে শাস্তি পাবে তা মুখ্যমন্ত্রীই বলে দিলেন।’’

লাভলি বিবি জানান, মাস ছয়েক আগে থেকেই তাঁকে বিধবা করে দেওয়া, মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করার হুমকি দিত এলাকার দলেরই কয়েকজন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কথায় তাঁর ভরসা, ‘‘মেয়েদের পড়াশোনা তো অন্তত বন্ধ হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন