দুর্ঘটনার পরে নালিশ ডামরায়

বালি তোলার গর্তই মরণফাঁদ দামোদরে

বাসিন্দারা জানান, বহিরাগতদের ঘাটে দেখলেই নদীতে নামতে নিষেধ করছেন তাঁরা। বুধবার সকালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০১:০৪
Share:

ডামরার ঘাটে বালি খাদান। ছবি: পাপন চৌধুরী

সার বেঁধে পরপর চলছে বালি খাদান। বালি তোলার কারণে নদীগর্ভে তৈরি হচ্ছে মরণফাঁদ। তার জেরেই আসানসোলের ডামরায় দামোদরে স্নান করতে নেমে বারবার ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ শহরবাসীর অনেকের। মঙ্গলবার তিন কলেজ ছাত্রের তলিয়ে গিয়ে মৃত্যুর পরে স্নানে নামা লোকজনকে সতর্ক করছেন এলাকার বাসিন্দারাই।

Advertisement

বাসিন্দারা জানান, বহিরাগতদের ঘাটে দেখলেই নদীতে নামতে নিষেধ করছেন তাঁরা। বুধবার সকালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। বাসিন্দাদের দাবি মেনে তিনি বিপজ্জনক এলাকা ঘিরে সতর্কীকরণ বোর্ড বসানোর আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অরিন্দম রায়।

মঙ্গলবার দুপুরে ডামরা ঘাটে স্নানে নেমেছিলেন পাঁচ তরুণ। তাঁদের মধ্যে তিন জন তলিয়ে যান। আশপাশের লোকজন ও পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে আসানসোল হাসপাতালে পাঠালে তিন জনকেই মৃত ঘোষণা করা হয়। বুধবার সকালে ওই এলাকার বাসিন্দারা দাবি করেন, দামোদরের এই অংশটি কার্যত মরণফাঁদ হয়ে আছে। প্রতি বছরই বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটছে। গত বছর তিনটি ঘটনায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একাধিক বালি খাদান চলছে। আগের দিন দুর্ঘটনা ঘটায় বুধবার বালি তোলার কাজ বন্ধ রাখা হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, যন্ত্রের সাহায্যে নদীগর্ভ থেকে বালি তোলার ফলে গভীর গর্ত তৈরি হচ্ছে। স্নান করতে নেমে অনেকেই উপর থেকে সেই গর্ত বুঝতে পারেন না। আচমকা তলিয়ে যান তাঁরা। সাঁতার না জানলে দ্রুত ডুবে যান অনেকে। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, অনেকেই মদ্যপ অবস্থায় নদীতে নামেন। তাতে বিপদের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।

এলাকার মানুষজনের দাবি, স্নান করতে নামা লোকজন সতর্ক না হলে দুর্ঘটনা বন্ধ করা যাবে না। এ দিন সকালে স্থানীয় বাসিন্দা টিব্রু মুর্মু, ঝন্টু মাজিরা বহিরাগতদের নদীর দিকে যেতে দেখলেই স্নানে নামতে নিষেধ করছিলেন। তাঁরা বলেন, ‘‘শহরের অনেকেই এই ঘাটের সমস্যা বুঝতে পারেন না। তাই দুর্ঘটনায় পড়েন। তাই আমরা সতর্ক করছি।’’ স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জিত পরামানিকের দাবি, ‘‘প্রশাসনের তরফে একটি সতর্কীকরণ বোর্ড দেওয়া হলে ভাল হয়।’’ ঘটনাস্থলের অদূরেই রয়েছে পুরসভার পাম্প হাউস। সেখানকার কর্মী সন্তোষ রায় জানান, এ দিন অন্তত জনা দশেক যুবককে স্নান করতে নামতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার দুপুরে যখন দুর্ঘটনাটি ঘটে, তখন বাড়িতে খেতে গিয়েছিলাম। তা না হলে ওদের নামতে দিতাম না।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় পাঁচ বছর ধরে এখানে বালি খাদান চলছে। সেটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। জেলা প্রশাসন জানায়, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। ঘাটটি বৈধ না হলে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে আশ্বাস আধিকারিকদের। এ দিন এলাকা পরিদর্শন করে মেয়র জিতেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘কয়েক দিনের মধ্যেই বিপজ্জনক জায়গাটি ঘিরে সতর্কীকরণ বোর্ড বসাব।’’ দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অরিন্দমবাবুও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন