রাজ্যের শস্যগোলার ২৩টি ব্লকের মধ্যে ১১টিতেই মাটির নীচ থেকে জল তোলা বিপজ্জনক। সম্প্রতি রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন দফতর সমীক্ষা করে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, হুগলি, বর্ধমান, বীরভূম-সহ আটটি জেলার ৭৬টি ব্লককে ‘সেমি ক্রিটিক্যাল’ এবং হুগলির গোঘাট ২ ব্লককে ‘ক্রিটিক্যাল’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। তালিকা পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের কাছেও। বর্ধমানের ৬টি ব্লক আগে ওই তালিকায় থাকলেও এ বার বেড়ে হয়েছে ১১টি।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাতার, কালনা ২, কাটোয়া ১, কাটোয়া ২, কেতুগ্রাম ১, কেতুগ্রাম ২, মঙ্গলকোট, মেমারি ২, মন্তেশ্বর, রায়না ১, রায়না ২ ব্লক এই তালিকায় রয়েছে। কাটোয়ার পাঁচটি ব্লকই বিপ্পজনক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। কৃষি বিষেশজ্ঞরা জানান, প্রতি বারই চাষের জন্য প্রচুর পরিমাণে মাটির তলা থেকে জল তোলা হয়। সব থেকে বেশি জল তোলা হয় বোরো ধান চাষের সময়। লাগামহীন জল তোলার কারণেই জলস্তর বিপদসীমার নীচে নেমে গিয়েছে বলে তাঁদের দাবি। কর্তারা জানান, এই এলাকাগুলি থেকে জল তোলা মানেই মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক, ফ্লোরাইড মেলার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিপদ বাড়বে আরও।
তাহলে দাওয়াই?
কৃষি কর্তারা জানান, মাটির নীচের জল ব্যবহার না করে বৃষ্টির জল ধরে রেখে বা ভূ-পৃষ্ঠের জমা জল ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে ছোট ছোট জলাশয়, কুয়ো তৈরি করে জল ধরে রাখতে হবে। বন্ধ করতে হবে কৃষি কাজে জলের অপচয়। কৃষি আধিকদের পরামর্শ, জেলার বেশির ভাগ চাষিই জমি ভাসিয়ে সেচ দেন। তা না করে বিন্দু এবং ফোয়ারা সেচ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যাতে প্রয়োজনীয় জলটুকুই খরচ হয়। এতে জলের অপচয় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমবে বলেও তাঁদের দাবি। এ ছাড়াও কাঁচা নালার মাধ্যমে সেচ না দিয়ে পাকা নালা তৈরিতে জোর দিতে হবে। এ কাজে প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চন যোজনায় টাকা মিলবে বলেও জানান আধিকারিকেরা।
কাটোয়ার মহকুমা কৃষি আধিকারিক আশিস বারুই বলেন, ‘‘নদী ও বিভিন্ন জলাশয়ের জলকে কী ভাবে বেশি করে চাষের কাজে ব্যবহার করা যায় তা আমরা ভাবছি। বিষয়টি নিয়ে বৈঠকও করব।’’ জেলার এক সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘সেমি ক্রিটিক্যাল এলাকাগুলিতে নতুন করে গভীর নলকূপ বসানোর কোনও অনুমতি দেওয়া হবে না। চাষিদের জল ঠিকমতো ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হবে।’’