Dengue

পথে নেমে ডেঙ্গি রোখা কবে, প্রশ্ন উঠছে শহরে

শহরের কাঞ্চননগর-রথতলা ছাড়া আর কোথাও সচেতনতা শিবির হয়নি। বিরোধীদের অভিযোগ, হাতেগোনা কয়েক জন ছাড়া বেশির ভাগ কাউন্সিলর ডেঙ্গি মোকাবিলায় ‘দায়িত্ব’ নিয়ে পথেও নামেননি। তাঁদের মধ্যে পুরপ্রধান স্বরূপ দত্তও রয়েছেন। যদিও পুরপ্রধান সে কথা মানতে নারাজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৭ ০০:২৩
Share:

নেই সাফাই। বর্ধমানের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

ডেঙ্গি মোকাবিলায় ঢিলেমি হলে প্রয়োজনে পুরবোর্ড ভেঙে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বার্তা দেওয়ার পরেই বর্ধমান পুরসভা নড়েচড়ে বসেছিল। সভা করে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রতিটি ওয়ার্ডে সচেতনতা শিবির করা হবে।

Advertisement

কিন্তু ঘটনা হল, শহরের কাঞ্চননগর-রথতলা ছাড়া আর কোথাও সচেতনতা শিবির হয়নি। বিরোধীদের অভিযোগ, হাতেগোনা কয়েক জন ছাড়া বেশির ভাগ কাউন্সিলর ডেঙ্গি মোকাবিলায় ‘দায়িত্ব’ নিয়ে পথেও নামেননি। তাঁদের মধ্যে পুরপ্রধান স্বরূপ দত্তও রয়েছেন। যদিও পুরপ্রধান সে কথা মানতে নারাজ।

স্বাস্থ্য দফতরের হিসবে, গত কয়েক দিনে বর্ধমান শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫২-তে। সাত নম্বর ওয়ার্ডে দশ জন ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে আট জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পেয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। বৈঠক করে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা, পুরসভাকে ‘ঘুম ভেঙে’ উঠে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সচেতনতা প্রচার, নিকাশির ব্যবস্থা, আবর্জনা পরিষ্কার করার কথা বলেছিলেন। পুরসভার দাবি, নিয়ম করে ধোঁয়া ও তেল স্প্রে করা হচ্ছে। যদিও স্বাস্থ্য দফতর মনে করছে, আরও বেশি করে ধোঁয়া ও তেল স্প্রে করতে হবে। নিকাশি ব্যবস্থা আরও উন্নত করার প্রয়োজন। পুর পারিষদ খোকন দাস জানিয়েছেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য ১০০ জন করে শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। ডেঙ্গি-আক্রান্ত এলাকা ৭ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গিয়েছে আবর্জনা রাস্তায় পড়ে রয়েছে। জমা জলও চোখে পড়েছে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়ন্ত দত্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা নরোত্তম রায়, বাবু মাহালি, দাশরথি চৌধুরীরা বলেন, “ডেঙ্গির ভয়ে আমরা কাঁপছি। অথচ, রাস্তাঘাট সাফাই হচ্ছে না। এক দিনও ধোঁয়া বা তেল স্প্রে হয়নি। আর কাউন্সিলর বিদেশে বসে আছেন।” ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ স্থানীয়দের।

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তা দেওয়ার পর পুরসভা নড়েচড়ে বসেছে ঠিকই, কিন্তু এখনও সক্রিয়তা চোখে পড়ছে না। অনেক কাউন্সিলরের মধ্যেই সেই তাগিদ দেখা যাচ্ছে না। আরও বেশি করে দায়িত্ব নিয়ে রাস্তায় নেমে মানুষকে সচেতন করার কথা আমরা পুরপ্রধান-সহ সব কাউন্সিলরকে বলেছি।” স্বাস্থ্য দফতরের আরও দাবি, শহরের বিভিন্ন জায়গায় ডেঙ্গির মশার লার্ভা মিলছে।

এত কিছু সত্ত্বেও ডেঙ্গি সংক্রান্ত তথ্য পেতে স্বাস্থ্য দফতর ভরসা রাখছে পুরসভার উপরেই। কারণ, বাড়ি বাড়ি ঘুরে ‘অজানা জ্বর’ খোঁজ করার দিন শেষ হয়ে গিয়েছে অক্টোবরে। ফলে স্বাস্থ্য দফতরের ‘মাথাব্যথা’ বেড়ে গিয়েছে। তারা ইতিমধ্যেই পুরসভাকে অনুরোধ করেছে, নভেম্বর মাসটাও পুরকর্মীরা বাড়ি বাড়ি খোঁজ নিয়ে দেখুক। ওই কর্মীদের দেওয়া প্রাথমিক রিপোর্টের জন্যই পুর-এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তদের খোঁজ পেয়ে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা গিয়েছে।

জেলার ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুনেত্রা মজুমদার বলেন, “অক্টোবরে ডেঙ্গি-সংক্রান্ত রিপোর্ট সংগ্রহের কর্মসূচি শেষ হয়ে গিয়েছে। নভেম্বরেও ডেঙ্গির প্রভাব থাকায় আমরা পুরসভাকে অনুরোধ করেছি, পুরকর্মীদের কর্মসূচি জারি রাখতে। তাতে স্বাস্থ্য দফতরের সুবিধা হবে। বাড়ি বাড়ি ঘুরলে মানুষও সচেতন হবে।” পুরপারিষদ (স্বাস্থ্য) অরূপ দাস বলেন, “এ ব্যাপারে পুরকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement