school

School: মানসিক অসুস্থ যুবকের ‘কাণ্ডে’ স্কুল চালাতে বিপাক

কালনা চতুর্থ চক্রের অবর বিদ্যলয় পরিদর্শক ফারুক আবদুল্লা জানিয়েছেন, স্কুলের পরিস্থিতির কথা বিডিও-র নজরে আনা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২২ ০৬:৩৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

কখনও বাড়ির ছাদে উঠে স্কুল চত্বরে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার, ভারী বাটখারা আছড়ে ফেলেন তিনি। আবার কখনও চলে ইটবৃষ্টি। এর সঙ্গেই বাড়ির দোতলার জানলায় বসে স্কুলের দিকে মুখ করে চলে অশ্রাব্য গালিগালাজ। কালনা ২ ব্লকের ঝড়ুবাটী নরেন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষিকা থেকে ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, এক ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ যুবকের ‘অত্যাচারে’ স্কুল বন্ধ হওয়ার জোগাড়। বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবক যে কোনও দিন বড় বিপদ ঘটিয়ে ফেলতে পারেন বলে মনে করছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে স্কুলের বারান্দায় প্রার্থনা করা বন্ধ করা হয়েছে। পড়াশোনা, মিড-ডে মিল খাওয়া চলে ক্লাসঘরের দরজা, জানলা বন্ধ করে। বিষয়টি জানিয়ে কালনা ২-এর বিডিও, অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক, বিএমওএইচ ও কালনা থানায় চিঠি দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরিবারের তরফে যুবকের অসুস্থতার কথা স্বীকার করা হয়েছে।

Advertisement

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মানসিক বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক অমিতাভ দাঁ জানিয়েছেন, সাইকোসিস বা ব্যক্তিগত কোনও অঘটনের (পার্সোনাল ডিসওর্ডার) ফলে এমনটা হতে পারে। পুলিশ, প্রশাসনের উচিত তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।’’

কালনা-বৈঁচি রোডের পাশেই রয়েছে ছোট্ট এই স্কুলটি। ২০১৭ সালে নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার পাওয়া এই স্কুলটিতে গোদা, ঝড়ুবাটী, দত্তদরিয়াটন, হাজরাপাড়া, গোবিন্দবাটি, নেপাকুলি এলাকার ছেলেমেয়েরা পড়তে আসে। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বর্তমানে ১১৭। রয়েছেন তিন জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। স্কুলের গা ঘেঁষেই রয়েছে একটি দ্বিতল বাড়ি। বাড়ির মালিক একসময়ে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০১২ সালে তিনি অবসর নেন। ২০২০ সালে মারা যান। বর্তমানে ওই বাড়িতে বাস করেন তাঁর স্ত্রী এবং এক ছেলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রয়াত শিক্ষকের স্ত্রী পেনশনের জন্য এখনও আবেদন জানাননি। মা, ছেলে দু’জনেই মানসিক স্থিতি হারিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তাঁরা। বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দু’জনে বাড়িতে থাকেন। গোটা বাড়িতে ছড়িয়ে রয়েছে আবর্জনাও। প্রতিবেশীদের দাবি, মাঝেমধ্যে ওই মহিলা বাইরে বার হলেও ছেলেটি দীর্ঘ দিন ধরে বাড়িতেই রয়েছেন। বাড়িতে কেউ ঢুকতে গেলেও হুমকি, গালিগালাজ করতে থাকেন তিনি, দাবি প্রতিবেশীদের।

Advertisement

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছরের ২৭ জুন থেকে ওই সমস্যা শুরু হয়েছে। স্কুলের তালা খুললেই শুরু হয়ে যাচ্ছে গালিগালাজ, ইট ছোড়া। ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই ভয়ে স্কুলে আসতেও চাইছে না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শান্তুনু মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ভয়ে ভয়ে স্কুল চালাতে হচ্ছে। যে ভাবে ইট ছুড়ছে ওই যুবক, তাতে যে কোনও দিন বিপদ হয়ে যাবে। বারান্দায় প্রার্থনাও বন্ধ করে দিতে হয়েছে।’’ মাঝে এক দিন নিরাপত্তার জন্য এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে স্কুলে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এক দিনই তিনি এসেছিলেন, দাবি স্কুলের। দ্রুত প্রশাসন পদক্ষেপ না করলে স্কুল বন্ধ রাখতে হতে পারে বলেও তাঁর আশঙ্কা।

স্থানীয় বাসিন্দা তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি বিজয় পাল বলেন, ‘‘আমার মেয়ে অঙ্কুশা ওই স্কুলে পড়ে। চিন্তায় থাকি।’’ গোদা গ্রামের মানিক দেবনাথ, ঝড়ুবাটীর উজ্জ্বল শেখরাও বলেন, ‘‘এমন আতঙ্কের মধ্যে স্কুল চলতে পারে না। ছেলেমেয়েদের সুরক্ষার কথা ভেবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’

ওই পরিবারের এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘স্কুল যাঁর সম্পর্কে অভিযোগ করছে সে আমার জেঠতুতো ভাই। জেঠিমা এবং ভাই দু’জনেই অসুস্থ। প্রশাসন ওঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে পরিবারের তরফে আপত্তি থাকবে না।’’

কালনা চতুর্থ চক্রের অবর বিদ্যলয় পরিদর্শক ফারুক আবদুল্লা জানিয়েছেন, স্কুলের পরিস্থিতির কথা বিডিও-র নজরে আনা হয়েছে। বিডিও অমিতকুমার চৌরাসিয়ার বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। বিএমওএইচ একটি টিমও ওই এলাকায় পাঠিয়েছিলেন। প্রথমে মা ও ছেলেকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে কাউন্সেলিং করানো হবে। পরে প্রয়োজনে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন