পরপর মৃত্যুতে ক্ষোভ দুর্গাপুরে

নিকাশিতে সংস্কারের অভাবই ডাকছে বিপদ

পরিকল্পিত শহরে অপরিকল্পিত নগরায়ন, নাকি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে উপেক্ষা করে নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কার না করা— প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন দুর্গাপুরবাসী। সামান্য বেশি বৃষ্টি হলেই শহরের বিস্তীর্ণ অংশ ডুবে গিয়ে নাগরিক দুর্ভোগ শুধু নয়, ভরা নর্দমায় পড়ে মৃত্যুর একাধিক ঘটনার জেরেই উঠছে এই সব প্রশ্ন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪১
Share:

ভারী বৃষ্টি হল রবিবারও। ছবি: বিকাশ মশান।

পরিকল্পিত শহরে অপরিকল্পিত নগরায়ন, নাকি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে উপেক্ষা করে নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কার না করা— প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন দুর্গাপুরবাসী। সামান্য বেশি বৃষ্টি হলেই শহরের বিস্তীর্ণ অংশ ডুবে গিয়ে নাগরিক দুর্ভোগ শুধু নয়, ভরা নর্দমায় পড়ে মৃত্যুর একাধিক ঘটনার জেরেই উঠছে এই সব প্রশ্ন।

Advertisement

দুর্গাপুর শহর এক সময়ে ছিল মূলত বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি কারখানার আবাসন নিয়ে গড়া। তার বাইরে কিছু পুরনো গ্রাম। ১৯৯৭ সালে ‘নোটিফায়েড এরিয়া’ থেকে পুরসভার মর্যাদা পায় এই শহর। পরে শহরে গড়ে উঠতে শুরু করে পরপর বেসরকারি কল-কারখানা, স্কুল, ডিগ্রি কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজ, আইটি পার্ক, শপিংমল, মাল্টিপ্লেক্স, বড় হোটেল, দেশি-বিদেশি সংস্থার অফিস, শো-রুম। ফলে, শহরে কর্মসূত্রে আসা মানুষজনের সংখ্যা বাড়ে। চাপ পড়ে শহরের নাগরিক পরিষেবার পরিকাঠামোর উপরে। অভিযোগ, পুরসভার তরফে দূরদৃষ্টির অভাব ছিল। তাই পরিকাঠামোর সংস্কার যথাসময়ে হয়নি। এখন শহর তার ফল ভুগছে।

বর্ষায় সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা। সামান্য বেশি বৃষ্টি হলেই শহরের বহু এলাকার মানুষের আতঙ্কে ভোগা শুরু হয়। দিন কয়েক আগেই টানা তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবে গিয়েছিল শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা। নিকাশি নালা ও রাস্তা একাকার হয়ে গিয়েছিল। ৯ অগস্ট দুপুরে এমন এক বৃষ্টির দিনে বাসস্ট্যান্ড থেকে হেঁটে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে বাড়ি ফেরার পথে হারিয়ে গিয়েছিলেন সিটি সেন্টারের কবিগুরু এলাকার বৃদ্ধা রেখা দেবরায়। পরের দিন তাঁর দেহ উদ্ধার হয় পাড়ারই এক কালভার্টের নীচে। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন, নিকাশি ব্যবস্থা সংস্কার না হওয়ার ফলেই এই ঘটনা। তাঁদের মতে, সিটি সেন্টার, বেঙ্গল অম্বুজা এলাকার তুলনায় কবিগুরু এলাকাটি ঢালু। ফলে, জলের তোড় অনেক বেশি থাকে। রাস্তা, নর্দমা, বাড়ির উঠোন সব একাকার হয়ে যায়। সব খোলা নর্দমা ঢেকে দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। একই রকম ভাবে শুক্রবার বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি ইস্পাতনগরীর হর্ষবর্ধন অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা অশোকা রায় (৬৫)। শনিবার সকালে তাঁর দেহ মেলে রাস্তার পাশে একটি নর্দমায়। এক্ষেত্রেও বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, একটু বেশি বৃষ্টি হলেই রাস্তা ও নর্দমা ফারাক করা যায় না। সে কারণেই কোনও ভাবে নর্দমায় পড়ে গিয়ে থাকতে পারেন অশোকাদেবী। অবিলম্বে নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কারের দাবি তোলেন তাঁরা।

Advertisement

পুরসভায় খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, সিটি সেন্টারের বিস্তীর্ণ এলাকার জল নর্দমা দিয়ে বয়ে গিয়ে ভগৎ সিংহ মোড়ের কাছে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) গড়া বড় নর্দমায়। কিন্তু উপযুক্ত সংস্কারের অভাবে সেই নর্দমা বেশ কিছু জায়গায় মজে গিয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, খোলা নর্দমা ঢাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। সেক্ষেত্রে সাফাইয়ের কাজে আরও সমস্যা হবে। অবিলম্বে ভূগর্ভস্থ গভীর প্রশস্ত নর্দমা বানিয়ে নিকাশি ব্যবস্থার আমূল সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

পুরসভার ডেপুটি মেয়র অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কী ভাবে সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা যায় সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ডিএসপি-র এক আধিকারিক অবশ্য দাবি করেন, ইস্পাতনগরীর নিকাশি ব্যবস্থা নিয়মিত সংস্কার করা হয়ে থাকে। এই এলাকায় জনসংখ্যার চাপও সে ভাবে বাড়েনি। কিন্তু বেশ কিছু বস্তি গড়ে উঠেছে। সেখানকার নিকাশি ব্যবস্থা তত আধুনিক নয়। ফলে, ইস্পাতনগরীতেও তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন