জল পেতে যেতে হয় চার কিলোমিটার পথ

এক টিন জলের দাম ৩ থেকে ৫ টাকা। এক ট্যাঙ্কার জল কিনতে খরচ প্রায় সাড়ে তিনশো টাকা। কিনতে না পারলে জল আনতে যেতে হয় প্রায় চার কিলোমিটার দূরে। গরম এখনও সে ভাবে পড়েনি। তার আগেই জল নিয়ে এমন সমস্যায় অন্ডালের উখড়ার নানা এলাকার বাসিন্দারা। উখড়া গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৮ সালে প্রথম উখড়ায় পাইপলাইন বসিয়ে জল সরবরাহের উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই সময়ে পাড়ায়-পাড়ায় পাইপ পাতা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

অন্ডাল শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১১
Share:

জলের জন্য অপেক্ষা। —নিজস্ব চিত্র।

এক টিন জলের দাম ৩ থেকে ৫ টাকা। এক ট্যাঙ্কার জল কিনতে খরচ প্রায় সাড়ে তিনশো টাকা। কিনতে না পারলে জল আনতে যেতে হয় প্রায় চার কিলোমিটার দূরে। গরম এখনও সে ভাবে পড়েনি। তার আগেই জল নিয়ে এমন সমস্যায় অন্ডালের উখড়ার নানা এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

উখড়া গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৮ সালে প্রথম উখড়ায় পাইপলাইন বসিয়ে জল সরবরাহের উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই সময়ে পাড়ায়-পাড়ায় পাইপ পাতা হয়। টিউবওয়েলও বসানো হয়। কিন্তু শুকো ও বাউরি পাড়ায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বসানো টিউবওয়েল থেকে এক দিনও ঠিক মতো জল পড়েনি। একই অবস্থা ধীবর, ময়রা, মুসলিম, চুনারি পাড়ায়। তবে এই এলাকায় পাইপ পাতার পরে প্রথম দু’বছর টিউবওয়েল থেকে জল মিলেছিল। অন্য টিউবওয়েল দিয়ে কখনও সপ্তাহে ৩ দিন, আবার কখনও মাসে ৩ দিন জল মেলে। ফলে, বাধ্য হয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের কুয়ো, পুকুর-সহ অন্য জলাশয় থেকে জল বয়ে নিয়ে আসতে হয়। অনেকে জল কিনে ব্যবহার করেন। সবথেকে বেশি সমস্যা হয় গ্রীষ্মকালে। তবে বছরের পর বছর ধরে চলমান এই সমস্যা মেটানোর জন্য অবশ্য আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পাননি ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরের বেশির ভাগ সময় দোকানদার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জল কিনতে হয়। গ্রীষ্মকালে বাড়ির কুয়ো শুকিয়ে যাওয়ায় অনেকে ট্যাঙ্কার ভর্তি জল কেনেন। একটি ট্যাঙ্কারে মোটামুটি ৩ হাজার লিটার জল থাকে। জলবাহকেরা ঠেলা রিকশা করে বাড়ি ও দোকানে জল পৌঁছে দেন। ট্যাঙ্কার ভর্তি জল বাড়ির শুকনো কুয়োয় রাখা হয়। জলাশয় থেকে দূরত্ব অনুযায়ী জলের দাম নেওয়া হয়। উখড়া বণিক সংগঠনের তরফে মহাদেব দত্ত বলেন, “আমাদের বাড়িতে প্রতি সপ্তাহে দু’টি ট্যাঙ্কার করে জল কিনতে হয়। আমরা চাই অজয় জল প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা হোক। তা ছাড়া সমস্যা মিটবে না।”

Advertisement

বাউরি পাড়ার বাসিন্দা কালিয়া বাউরি জানান, উখড়া থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে শঙ্করপুর মোড় এলাকায় জল সরবরাহের প্রধান পাইপ রয়েছে। সেই কারণে ওই মোড়ে প্রায় সব সময় জল পাওয়া যায়। উখড়ার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বছরের অন্য সময় ওই এলাকা থেকে জল নিয়ে আসেন। কিন্তু অন্য এলাকার জল সরবরাহ অনেক কমে যাওয়ায় এখানে চাপ বাড়ছে। তাই ভরা গ্রীষ্মে শঙ্করপুর মোড়েও পর্যাপ্ত জল মিলছে না। জলের জন্য লাইন দেওয়া নিয়ে ছোটখাট ঝামেলা তো লেগেই রয়েছে। ফলে, অনেকেই বাধ্য হয়ে ৪ কিলোমিটার দূরে নবঘনপুর বা ময়রা শ্মশানের কাছ থেকে জল নিয়ে আসছেন।

তবে অজয় জল প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই সমস্যা অনেকটাই মিটবে বলে আশা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় বিধায়ক সোহরাব আলি জানান, অজয় নদের পাণ্ডবেশ্বর ঘাটের কাছে জল প্রকল্পের জলাধার তৈরির কাজ শেষ। পাইপলাইন পাতার কাজ চলছে। তাঁর দাবি, “জল সরবরাহের প্রধান পাইপ লাইনটি উখড়ার আগে রেল লাইনের নীচ দিয়ে আনতে হবে। রেলের প্রয়োজনীয় অনুমতি পেতে দেরি হওয়ায় কারণে ওই জায়গার কাজ আটকে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রেলের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”

অন্ডালের বিডিও মানস পাণ্ডের আশ্বাস, গত সপ্তাহে রেলকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এই নিয়ে ইতিবাচক কথাবার্তা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে মাস তিনেকের মধ্যে অজয় জলপ্রকল্পটি চালু হয়ে উখড়ার জল সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।

এই আশ্বাস শুকনো হবে না, আশায় রয়েছেন উখড়াবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন