সঙ্গী: পড়শিদের সঙ্গে কৃষ্ণপ্রসাদবাবু। ডিএসপি টাউনশিপে। নিজস্ব চিত্র
দাদা আর ভাই, এই ছিল দু’জনের সংসার। দাদা মারা যাওয়ার পরে একেবারেই একা বাড়িতে মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই। এই পরিস্থিতিতে পড়শি, স্থানীয় কাউন্সিলরেরা পাশে দাঁড়ালেও, তাঁদের চিন্তা, ষাটোর্ধ্ব এই মানুষটির ভবিষ্যৎ কী। দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের জয়দেব অ্যাভিনিউয়ের ঘটনা। সোমবার উপযুক্ত পদক্ষেপ করার জন্য পড়শিরা দ্বারস্থ হয়েছেন মহকুমাশাসকের (দুর্গাপুর)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকার একটি আবাসনের একতলায় থাকেন কৃষ্ণপ্রসাদ ভট্টাচার্য। দাদা আনন্দবাবুর সঙ্গে তিনি থাকতেন। ১২ মার্চ রাতে আনন্দবাবুর মৃত্যু হয়। সকালে কৃষ্ণপ্রসাদবাবুই পড়শিদের ডেকে বলেন, ‘‘রাতে দাদা মারা গিয়েছে। কী করতে হবে তোমরা দেখো।’’ এর পরে প়ড়শিরা সকলে মিলে আনন্দবাবুর শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করেন। দুর্গাপুর পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা পুরসভার মুখ্য সচেতক স্বরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমিও কিছু অর্থের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। কিছু লোকজনও পাঠাই। সত্যিই খুবই খারাপ অবস্থায় দিন কাটছে ওই বৃদ্ধের।’’
পড়শিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, আনন্দবাবু সেন্ট্রাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে একসময় আর্থিক সংগতি ছিল। কিন্তু শেষ দিকে আনন্দবাবুও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন বলে জানা গিয়েছে। এর পরে থেকে পাড়ার লোকজনই দেখভাল করতেন দুই ভাইকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আনন্দবাবুর স্ত্রী অন্য শহরে থাকেন। তাঁদের বোন বিবাহসূত্রে থাকেন বিহারে। তাঁদের আর এক ভাই থাকেন কলকাতার বেহালায়। আনন্দবাবুর মৃত্যুর পরে পরিবারের কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানান পড়শিরা। পড়শিরা জানান, পরিস্থিতি জটিল হয়ে গিয়েছে আনন্দবাবুর মৃত্যুর পরে থেকেই। মঙ্গলবার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তক্তাপোশের উপরে নোংরা জামা-কাপড় পড়ে বসে রয়েছেন কৃষ্ণপ্রসাদবাবু। জামাকাপড় পড়ে আছে ইতিউতি। পাশের তাকিয়ায় বেশ কিছু বই। নিজেই জানালেন, ‘ওগুলো দাদার’।
স্থানীয় বাসিন্দা কাশীরাম ভট্টাচার্য, পিনাকী ভট্টাচার্য, সুচিত্রা দাস, দেবকুমার ঘোষ’রা জানান, কৃষ্ণপ্রসাদবাবুর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘর-বাড়ি সাফ করার জন্যও রাখা হয়েছে এক জনকে। কিন্তু সেই সঙ্গেই প়ড়শিদের চিন্তা, ‘‘এর তো একটা স্থায়ী সমাধান দরকার। না হলে ওই বৃদ্ধের বাকি দিনগুলো কাটবে কী ভাবে।’’ মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) শঙ্খ সাঁতরা বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তির চিকিৎসা ও থাকার ব্যবস্থা করা হবে।’’ সাধ্যমতো পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন কাউন্সিলর স্বরূপবাবুও।