পুজো: রথতলায়। নিজস্ব চিত্রc
রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ি, যাত্রীবাহী বাস। সামনে পুজো চলছে যে। বাঁকা নদী থেকে ঘটে করে জল ভরে এনে চলেছেন এলাকার মহিলারা। হোম-যজ্ঞ তো হলই। সঙ্গে ছিল নারকেল, দুধ-সহ নানা উপাচার। পরপর দুর্ঘটনা ঘটায় শনিবার এ ভাবেই বর্ধমানের রথতলায় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ‘শনির দশা’ কাটাতে রাস্তাতেই পুজোর আয়োজন করলেন বর্ধমানের রথতলা-লাকুরডি এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। রাস্তা আটকে এ ভাবে আচার পালনের সমালোচনা করেছেন নিত্যযাত্রী ও বিজ্ঞানকর্মীরা। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের উপরে আস্থা না থাকাতেই এমনটা হয়েছে।
কেন এমন আয়োজন? এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ম্যারাপ বেঁধে ঘট-পুজো করছিলেন বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ও টুটুল অধিকারী। তাঁদের দাবি, “এই এলাকায় গত কয়েক দিনে ১০ জন দুর্ঘটনার বলি হয়েছেন। রাস্তার ‘আপদ’ কাটাতে গ্রহরাজের (শনি) পুজো করা হয়েছে। শনিবার বেলা ১২টা থেকে পঞ্চমীর তিথি পড়েছে। এই সময়টাই ‘শান্তি’ ফেরানোর আদর্শ সময়।’’ সম্প্রতি এই এলাকায় ট্যাঙ্কার উল্টে একটি গাড়ির সাত জন যাত্রী মারা যান। সেই ঘটনার দিন কয়েক পরে ফের একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারায়। সেখানেও মৃত্যু হয় তারকেশ্বরের এক যুবকের।
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলল পুজোপাট। ঘটের জলে ধুইয়ে দেওয়া হয় দুর্ঘটনাস্থলটি। তারপরে দুধ দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে নারকেল ফাটিয়ে চলল পুজো। পুজো শেষে জাতীয় সড়কের দু’ধারে ছেটানো হল শান্তির জল। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা রমেশ যদুবংশী, রঞ্জিত কালিন্দিদের দাবি, “দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের রথতলা-লাকুরডি অংশে ‘শনির দশা’ লেগেছে। তা কাটাতেই এই পুজো।’’
এ দিন এমন পুজোর জেরে অবশ্য বেশ কিছুক্ষণ রাস্তার দু’ধারে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। কলকাতাগামী বাসের যাত্রী কলেজ শিক্ষিকা শমিস্তা রায়চৌধুরী, আসানসোলের সুপ্রিয় সেনশর্মাদের কথায়, “পুজোটাই বলে দিচ্ছে দুর্ঘটনা রুখতে পুলিশ ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ ব্যর্থ। রাস্তা আটকে থাকায় আমাদের সমস্যা হয়েছে।’’
পুলিশ ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট নানা মহলেও। পুজোয় যোগ দিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর শঙ্করী ঘোষ বলেন, “পুলিশ ও সড়ক কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।’’ ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির বর্ধমান শাখার সম্পাদক অনাবিল সেনগুপ্তের দাবি, ‘‘পুজো করে দুর্ঘটনা আটকানো সম্ভব নয়। মানুষকে আইন মানতে হবে। আইন রক্ষাকারীদেরও ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
তবে শুধু বাসিন্দারাই নন। গত বুধবার অমাবস্যার রাতে রথতলার আমবাগানে পুলিশি সহযোগিতায় কালীপুজো হয় বলে বাসিন্দাদের একাংশের দাবি। যদিও পুলিশ তা স্বীকার করেনি। পুলিশকর্মীদের দাবি, নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘‘মানুষের আমাদের উপরে আস্থা রয়েছে। গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও চালকদের নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকে না বলেই দুর্ঘটনা ঘটছে।”