ফের ভূমিকম্প, আতঙ্কে উধাও ছুটির মেজাজ

ফের একবার কেঁপে উঠল বর্ধমান। শনিবার সকালে গোটা রাজ্যের সঙ্গে বর্ধমানেও ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছিল। কয়েকটি বাড়ির দেওয়ালে ফাটল দেখা যায়। রবিবার সকালে ফের ভূকম্পন অনুভূত হয় গোটা জেলায়। নতুন করে কয়েকটি বাড়িতে ফাটল ধরেছে এ দিন। আতঙ্ক ছড়িয়েছে জেলার নানা প্রান্তে। তবে শনিবারের তুলনায় এ দিন কম্পনের মাত্রা ছিল কিছুটা কম।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৫
Share:

কম্পনে জেলাশাসকের বাংলোর দেওয়ালে ফাটল। —নিজস্ব চিত্র।

ফের একবার কেঁপে উঠল বর্ধমান। শনিবার সকালে গোটা রাজ্যের সঙ্গে বর্ধমানেও ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছিল। কয়েকটি বাড়ির দেওয়ালে ফাটল দেখা যায়। রবিবার সকালে ফের ভূকম্পন অনুভূত হয় গোটা জেলায়। নতুন করে কয়েকটি বাড়িতে ফাটল ধরেছে এ দিন। আতঙ্ক ছড়িয়েছে জেলার নানা প্রান্তে। তবে শনিবারের তুলনায় এ দিন কম্পনের মাত্রা ছিল কিছুটা কম। রবিবার ভূমিকম্পের পরে শহরের বিভিন্ন শপিংমল থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ছুটোছুটি শুরু হয়। বিভিন্ন বহুতলের বাসিন্দারা নিচে নেমে আসেন। বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি থাকা অনেক রোগী ওয়ার্ডের বাইরে চলে আসেন। চিকিৎসক ও নার্সেরা তাঁদের বুঝিয়ে ভিতরে ঢোকান। একই ছবি দেখা গিয়েছল গতকাল। শহরের একটি শপিংমলের কর্মী রুবি মুখোপাধ্যায় বলেন, “ভূমিকম্প হচ্ছে বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি বেরোতে যাই। তখন মাথা ঘুরে যায়।” স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, ভূকম্পনের সময় তাঁরা ভেবেছিলেন রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছে। পরে আসল ঘটনা বুঝতে পারেন। বর্ধমানের রাজগঞ্জের রাধাকান্তপল্লীর বাসিন্দা গৃহবধু রীতা চক্রবর্তী বলেন, “ছোটবেলা থেকে কখনও এত ভয় পাইনি। শনিবার দুপুরে রান্না করছিলাম। হঠাৎ কাঁপতে কাঁপতে উনুন থেকে কড়াই পড়ে যায়। তখন গোটা বাড়িটা কাঁপছিল।” কাঞ্চননগরের বাসিন্দা শ্যামসুন্দর দত্ত জানান, শনিবার সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় ভূকম্পনের জন্য রাস্তায় উল্টে পড়ে যান তিনি।

Advertisement

আউশগ্রামের উক্তা পিচকুড়ির একটি স্কুলে শনিবার ফাটল দেখা গিয়েছিল। এ দিন সেই ফাটল আরও বড় হয়েছে। পাল্লা রোডের একটি স্কুলে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়ে রবিবার ৩ জন আহত হন। বর্ধমান শহরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলেও কয়েকজন ছাত্রী জ্ঞান হারান। রবিবারের ভূকম্পনের পরে ফের কয়েকটি বাড়ির দেওয়ালে ফাটল দেখা গিয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

কালনা শহর ও সংলগ্ন এলাকায় এ দিন ১২টা ৪০ মিনিট নাগাদ কম্পন অনুভূত হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবারের পর ফের এই কম্পনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শহরবাসীর মধ্যে। চলতে চলতে অনেক গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। অনেকে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন। শনিবার ভূকম্পনের পরেও আতঙ্ক ছড়িয়েছিল কালনায়। স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামলাল চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘শনিবার বাজারে যাওয়ার সময় আচমকা গোটা শরীর দুলতে থাকে। এ দিনও কম্পন অনুভব করতে পেরেছি।’’ শহরের ছোট ব্যবসায়ী মন্টু সাহা বলেন, ‘‘রবিবারের তুলনায় গতকালের ভূমিকম্পের তীব্রতা বেশি ছিল। আমি মেঝেতে ছিটকে পড়ে যাই। আজ ফের ভূমিকম্প হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।’’ প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, শনিবার কালনার সুইমিং পুলের জলস্তর প্রায় ৪ ফুট উঁচুতে উঠে গিয়েছিল। মন্তেশ্বরে এক স্কুল ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে যায়। কয়েকটি স্কুলে আগাম ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় বড় ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে কয়েক মুর্হুতের কম্পনের এ দিনের ছুটির মেজাজটাই নষ্ট হয়ে যায়। অন্যান্য রবিরারের তুলনায় এ দিন বিকেলে জেলার বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহ, শপিং মল, পার্কগুলিতে ভিড় অনেক কম ছিল। গাড়ি চলাচলও কমে যায়। পাড়ার মোড়ে, খেলার মাঠের ছোট ছোট জটলায় উঠে এসেছে চাপা আতঙ্ক, ‘‘সোমবার কাজের দিনে ফের ভূমিকম্প হবে না তো?’’

জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “শনি ও রবিবারের ভূমিকম্পে জেলাশাসকের বাংলো-সহ কয়েকটি জায়গায় বাড়িতে ফাটল দেখা গিয়েছে। কয়েকটি স্কুলের পড়ুয়ারা অসুস্থ হয়ে যায়। এ ছাড়া বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন