নাটকের মহড়ায় ব্যস্ত আউশগ্রামের পাণ্ডুক গ্রামের মহিলারা। নিজস্ব চিত্র
কবে শেষ বইয়ের পাতা উল্টেছেন মনে পড়ে না তাঁদের। তবে মাস দুই ধরে নিয়ম করে সন্ধেবেলা বাড়ির কাজ সামলে খাতা নিয়ে পাঠ মুখস্ত করতে বসছেন তাঁরা। সংসারের কাজ তাড়াতাড়ি মিটিয়ে বিকেল হলেই চব্বিশ প্রহর তলায় একজোট হচ্ছেন সকলে। দেড়–দু’ঘন্টা ধরে চলেছে অনুশীলন। এ বার দুর্গাষ্টমীতে তাক লাগিয়ে দিতে হবে যে।
আউশগ্রামের পাণ্ডুক গ্রামের চব্বিশ প্রহত তলায় প্রায় তিরিশ বছর ধরে দুর্গাপুজো হয়। মহিলারা পুজোর নানা কাজে যোগ দিলেও নাটক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আগে সে ভাবে নামেননি। কিন্তু এ বার সেই আগল ভেঙেছেন বয়স্করা। মীরা ঘোষ, কল্যাণী সরকার, সুষমা ভান্ডারি, মায়া ঘোষ, মৌসুমী ঘোষ, মনিকা ঘোষ, রীনা মণ্ডলদের কারও বয়স যাট, কারও সত্তর— কিন্তু মহড়ায় তাঁদের পাঠ বলা, প্রাণ খোলা হাসি বলছে বয়স শুধু সংখ্যার হিসেব। রীনাদেবীর কথায়, ‘‘দুর্গা মায়ের আগমন আমাদের কাছে স্বাধীনতার বার্তা।’’
পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অমল ঘোষ জানান, এত দিন গ্রামের পুরুষেরাই মূলত যাত্রা, নাটক করতেন। এ বার মেয়েদের হাতই সেই দায়িত্ব। ১৩ জন অভিনয় করছেন নাটকে। জানা গিয়েছে, অষ্টমীর দিন সন্ধ্যায় ওই ১৩ জন মিলেই মঞ্চস্থ করবেন মেয়েদের জীবনের কথা নিয়ে লেখা সামাজিক নাটক ‘মেয়েরা আজও জীবন্ত জ্বলে’।
নাটকের দলের বেশির ভাগ বয়স্ক, তবে গ্রামে সদ্য বিয়ে হয়ে আসা বধূও রয়েছে সেই দলে। সারা বছর সংসারের নানা ঘার-প্রতিঘাতের মাঝে এটাই নিজেকে খুঁজে পাওয়া ওঁদের। রবিবার চলছিল চূড়ান্ত মহড়া। তার মাঝেই নতুন বউ আশা বললেন, ‘‘শাশুড়ি মা ভীষণ উৎসাহ দিচ্ছেন। আবার এক জা নাটকে অভিনয় করছেন বলে অন্য জা তাঁর কাজ করে দিচ্ছেন। পুরনো সম্পর্কগুলোও নতুন করে বেঁচে উঠছে এই সুযোগে।’’
সাত বছর বিয়ে হয়ে গ্রামে এসেছেন মৌসুমী ঘোষ। তিনিও বলেন, “আমরা সেভাবে বাড়ির বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাই না। পাড়ার মা–কাকিমাদের সঙ্গে নাটক করাটা জীবনে অন্য ভাললাগা এনে দিচ্ছে।’’ বছর ষাটেকের কল্যাণী সরকারও জানান, গ্রামে যাত্রা নাটকের রেওয়াজ বহু দিনের। তবে বাড়ির কর্তারাই সে সব করতেন এত দিন। তাঁরা শুধু দেখতে যেতেন। এ বার সুযোগ এসেছে মেয়েদের।
প্রথম বার মঞ্চে উঠতে, সবার সামনে পাঠ বলতে ভয় করবে না? সত্তর ছুঁইছুঁই মীরা ঘোষের দাবি, “ছোট থেকে জীবনের লড়াইয়ে হার মানিনি কখনও। মঞ্চেও আমরা সফল হবই।”