বছর দেড়েক সাবমার্সিবল পাম্পের তার জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিল একটি গর্ভবতী গরু। অভিযোগ ছিল, বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতিতেই তারটি ওভাবে পড়েছিল। গরুর মালিক আর্থিক সাহায্যও চেয়েছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। এ বার সেই মামলাতেই বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থাকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল বর্ধমানের ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।
সভাপতি অশোককুমার মণ্ডল ও সদস্য শিল্পী মজুমদারকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী, রায় ঘোষণার ৪৫ দিনের মধ্যে গরুর দাম ও ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৭ হাজার টাকা এবং মামলার খরচ হিসেবে এক হাজার টাকা অভিযোগকারীকে দিতে হবে। ওই টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না দিলে ৮ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হবে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থাকে। বৃহস্পতিবার অভিযোগকারীর আইনজীবী শান্তিরঞ্জন হাজরা বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতিতেই গরুটির মৃত্যু হয়েছে, এটা বোঝার পরেই আদালত প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরকে দিয়ে গরুর দাম নির্ধারণ করিয়েছিল। ওই দফতর দাম জানান ১৫ হাজার টাকা। তার উপর ভিত্তি করেই আদালত বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থাকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে।’’
২০১৫ সালের ২০ জুন মাঠে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গরুটি মারা যায়। ওই গরুর মালিক, ভাতারের আড়রা গ্রামের উজ্জ্বল কোনারের অভিযোগ, সাবমার্সিবল পাম্পের সংযোগকারী বিদ্যুতের তারটি খুলে পড়েছিল বেশ কিছুদিন ধরে। ওই পাম্পের মালিকরা বারবার বিদ্যুৎ দফতরকে জানালেও বিদ্যুৎ সংযোগ করা হয়নি। বিদ্যুৎ দফতরের উদাসীনতার কারণেই তাঁর গরুটি মারা গিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পরে উজ্জ্বলবাবু গরুটিকে নিয়ে স্থানীয় ব্লক প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরে যান। ময়না-তদন্তের রিপোর্টেও বলা হয়, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গরুটি মারা গিয়েছে। গরুটি গর্ভবতী ছিল বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। এরপরে আর্থিক সাহায্য চেয়ে বিদ্যুৎ দফতর ও প্রাণিবিকাশ দফতরে চিঠি দেন উজ্জ্বলবাবু। কিন্তু কোনও দফতরের তরফেই সাহায্য মেলেনি।
পরে ওই রিপোর্ট দিয়ে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেন তিনি। উজ্জ্বলবাবু জানান, চাষের সঙ্গে তিনটে গরুর দুধ বিক্রি করে তাঁর সংসার চলে। বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতিতে প্রসূতি গরুটি মারা যাওয়ায় অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে তাঁর। আইনজীবীরা জানান, আদালতের রায়ে জানানো হয়েছে, বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতির জন্য এক জন মানুষেরও মৃত্যু হতে পারত। আশা করা যায়, এই ঘটনার পরে বিদ্যুৎ দফতর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে সর্তক থাকবে।