Sainbari Incident

৫০ বছর পরেও রাজনীতিতে সাঁইবাড়ি

১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ বর্ধমান শহরের প্রতাপেশ্বর শিবতলা লেনে খুন হন দুই ভাই, মলয় সাঁই ও প্রণব সাঁই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২০ ০১:৪৯
Share:

এই সেই সাঁইবাড়ি। নিজস্ব চিত্র

অর্ধশতাব্দী পার, কিন্তু বর্ধমানের রাজনীতিতে এখনও ‘জীবন্ত’ রয়েছে সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড।

Advertisement

আজ, মঙ্গলবার ওই ঘটনার পঞ্চাশ বছর পূর্তি ঘিরে জেলা জুড়ে নানা কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল। সকালে শহিদ বেদিতে মাল্যদান করে কর্মসূচি শুরু করবেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ। বিকালে কর্মসূচি শেষ করার কথা তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের (ববি)। যদিও কমিশন গড়ে ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট তৃণমূল কেন প্রকাশ্যে নিয়ে এল না, সে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। কংগ্রেসেরও দাবি, তৃণমূল ওই হত্যাকাণ্ডকে যতটা ‘রাজনৈতিক’ করেছে, সে ভাবে দোষীদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে উদ্যোগী হয়নি।

১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ বর্ধমান শহরের প্রতাপেশ্বর শিবতলা লেনে খুন হন দুই ভাই, মলয় সাঁই ও প্রণব সাঁই। তাঁদের সঙ্গে নিহত হন সেই সময়ের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ছাত্র জিতেন রায়। ওই বাড়িতে পড়াতে যেতেন তিনি। ওই মামলায় নাম জড়ায় প্রয়াত নিরুপম সেন, বিনয় কোঙার-সহ সিপিএমের বহু নেতা-কর্মীর। কংগ্রেসের সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই তারাপদ মুখোপাধ্যায় কমিশন গড়ে তদন্ত শুরু করেন। পাঁচ বছর পরে, ১৯৭৭ সালে সিপিএম ক্ষমতায় এসে ওই কমিশন বন্ধ করে দেয়। সাঁই পরিবারের অভিযোগ, মুখোপাধ্যায় কমিশন তদন্ত-রিপোর্ট দিলেও বিচার মেলেনি। আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অরুণাভ বসুকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিশন গঠন করেন। সেই কমিশনের রিপোর্টও এখনও প্রকাশ পায়নি। জিতেন রায়ের ভাইপো চিরকুমারবাবু বলেন, “দোষীরা একদিন শাস্তি পাবে, এই আশা এখনও করি।’’ ওই শিক্ষকের স্মরণে মঙ্গলকোটের কোঁয়ারপুরেও প্রতি বছর সভাও হয়।

Advertisement

সাঁই পরিবারের অভিযোগ, পুরো বাড়ি ঘিরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রান্নাঘরে ঢুকে প্রণব আর জিতেনকে বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে-পিটিয়ে খুন করা হয়। পাশের বাড়িতে খাটের তলায় লুকিয়ে থাকা মলয়কেও টেনে বার করে খুন করা হয়। পরিবারের এক সদস্য উমা সাঁই বলেন, “তিন জনকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল। ওই ঘটনা পঞ্চাশ বছর পরেও আতঙ্কের। প্রতিবাদ জানাতে দিদিকে (মুখ্যমন্ত্রী) চিঠি লিখেছিলাম। দিদির নির্দেশে রাজ্যের পুরমন্ত্রী আমাদের কাছে আসছেন বলে জানতে পেরেছি।’’ তাঁর আবেদন, “কমিশনের রিপোর্ট দ্রুত প্রকাশ করা হোক।’’

কংগ্রেসের জেলা কার্যকরী সভাপতি কাশীনাথ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “রাজনীতির ইতিহাসে বর্ধমানের সাঁইবাড়ির মতো অমানবিক ঘটনা হয়নি। সেই ঘটনা নিয়ে তৃণমূল রাজনীতি করে গেল। কিন্তু তদন্তে উৎসাহী হল না।’’ বিজেপি নেতা সন্দীপ নন্দীরও কটাক্ষ, “সাঁইবাড়ির ঘটনা নিয়ে তৃণমূল রাজনীতি করেই গেল। প্রকৃত সম্মান দিল না।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের কথায়, “কংগ্রেস কী ভাবে সাঁইবাড়ির খুনিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে সেটাই মানুষের কাছে তুলে ধরা হবে। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে বিজেপি।’’ আর সিপিএম নেতা অমল হালদারের প্রতিক্রিয়া, “তৃণমূলের সরকার কত কিছু করল! এ সব কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন