কারখানাটা বাঁচুক, আর্জি দেবীর কাছে

বুধবার বিকেল থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছে শিল্পাঞ্চলে। বৃহস্পতিবারও সূর্যের মুখ বিশেষ দেখা যায়নি।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৩৬
Share:

ঝলমলে: রাধানগর রোড পার্কে। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

এক প্রান্তে আলো ঝলমল শহর। অন্য প্রান্তে নিকষ আঁধার। কালীপুজোর দিন, বৃহস্পতিবার ছবিটা পশ্চিম বর্ধমানের। আসানসোল শহর, বার্নপুর-সহ শিল্পাঞ্চলের নানা প্রান্তে আলোর রোশনাই প্রতি বারের মতো এ বারেও চোখে পড়ার মতো। তবে উল্টো দিকে, রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেবল্‌সের আবাসনে রোশনাই তো দূরঅস্ত, বিদ্যুৎ সংযোগই নেই।

Advertisement

বুধবার বিকেল থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছে শিল্পাঞ্চলে। বৃহস্পতিবারও সূর্যের মুখ বিশেষ দেখা যায়নি। তবে তা বলে আসানসোল শহর, বার্নপুরের আলোর রোশনাইয়ে খামতি পড়েনি, কোর্ট রোড, গরাই রোড, হাটন রো়ড-সহ লাগোয়া নানা এলাকায় পুজো মণ্ডপ তো বটেই, বহুতলের ছাদ, সব খানেই আলোর ফুলঝুরি। বেশ কিছু সর্বজনীনের উদ্যোক্তারা আবার সন্ধ্যা থেকেই আতসবাজি ও তুবড়ি প্রতিযোগিতার আসর বসিয়েছেন। উৎসবে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ধনলক্ষ্মীর পূজো। শহরের নানা দোকান ও পাইকার ব্যবসায়ীদের আড়তে পুজো হয়েছে গণেশ-লক্ষ্মীর।

যদিও উৎসবের ঠিক উল্টো ছবি শিল্পাঞ্চলের অন্য প্রান্তে। গত মার্চে পাকাপাকি ঝাঁপ ফেলেছে রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেবল্‌স। আবাসন থাকলেও সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। যে কয়েক জন আবাসিক এখনও আছেন আবাসনগুলিতে, তাঁরা আবেদন করা হলেও এ পর্যন্ত রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ সংযোগ দেয়নি। ফলে অন্ধকারেই কালীপুজো, দীপাবলির রাত আঁধারেই কাটল তাঁদের।

Advertisement

এলাকায় গিয়ে প্রায় কোথাও এলইডি বাল্বের জৌলুস নজরে পড়েনি। আকাশে ওড়েনি রঙিন ফানুস। শুধু এলাকাই আঁধারে এমনটা নয়, রয়েছে চাকরি হারানোর যন্ত্রণাও। তাই বোধহয় ‘‘ঘরে বাতি দিইনি’’, বলতে বলতে এক রাশ অভিমান, ক্ষোভ ঝরে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দা দীপেন চক্রবর্তীর গলায়। পাশ থেকে কাজ হারানো অন্য এক শ্রমিক বলেন, ‘‘কালীপুজো আলোর উৎসব। আমাদের জীবনের আলো ছিল, ওই কারখানাটা। সেটাই শেষ হয়ে গেল।’’

উৎসবের দিনে আঁধার বার্নপুরের বার্নস্ট্যান্ডার্ড কলোনিতেও। প্রদীপ, মোমের আলোয় সেজেছে কলোনি। কিন্তু সবই যেন বড্ড থমথমে। কারণটা কী? এর শ্রমিক বলেন, ‘‘কারখানার ভাগ্য তো সুতোয় ঝুলছে। শুনেছি আমাদের কারখানাটাকে দেউলিয়া ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।’’

কর্মীদের দাবি, হয়তো চলতি বছরের নভেম্বরেই কিছু একটা সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। তাই খানিক অনিশ্চয়তা নিয়ে সংস্থার কর্মী বিনয় সিংহ বলেন, ‘‘আনন্দ কী ভাবে করব। দেবীর কাছে একটাই প্রার্থনা, কারখানাটা
যেন বাঁচে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন