সুখসাগর পেঁয়াজ। নিজস্ব চিত্র
নাশিক ও কালনা— বছরখানেক আগে থেকেই মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গের এই দুই এলাকার মধ্যে একটা যোগসূত্র তৈরি হয়েছে। আর সেই সূত্র তৈরি করেছে পেঁয়াজ চাষ। এ বার পেঁয়াজ চাষের বিপণন ও গবেষণায় এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থান নাশিকে চললেন কালনা ১ ব্লকের ৩০ জন পেঁয়াজ চাষি। উদ্যোগ, কালনা মহকুমার উদ্যানপালন দফতরের।
নাসিকে গিয়ে কালনার চাষিরা মূলত পেঁয়াজ চাষের উন্নত কৌশল, বিপণন-সহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ পাবেন। কিন্তু দেশের অন্য জায়গা ছেড়ে নাসিককেই বেছে নেওয়া কেন? উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা যায়, দেশের মধ্যে পেঁয়াজ চাষে সব থেকে এগিয়ে নাসিক। সেখানে পেঁয়াজ গবেষণাকেন্দ্র, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, পেঁয়াজ সংরক্ষণের কৌশল রয়েছে চাষি ও গবেষকদের কাছে। তা ছাড়া ভারত তথা এশিয়ায় পেঁয়াজের সবথেকে বড় পাইকারি বাজার রয়েছে নাসিকের লাসালগাঁওতে।
তবে নাসিকের সঙ্গে কালনা, তথা সাবেক বর্ধমানের যোগ নতুন নয়। এর আগে ২০১৪-য় বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে সক্রিয় হয় সাবেক বর্ধমান জেলা প্রশাসন। সেই সময়ে মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে ‘এগ্রিফাউন্ড ডার্করেড’ প্রজাতির পেঁয়াজ বীজ আনা হয় জেলায়। তা চাষিদের মধ্যে বিলিও করে উদ্যান পালন দফতর। কিন্তু তার পরেই কর্তাদের একাংশের অভিজ্ঞতা, এ রাজ্যে শীতকালীন ‘সুখসাগর’ জাতীয় পেঁয়াজের চাষই জনপ্রিয়। বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষ এ পর্যন্ত তেমন ব্যাপক নয়। ফলে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়, তাতে চলে তিন-চার মাস। বাকি সময়ে নির্ভর করতে হয় মহারাষ্ট্র, গুজরাতের মতো রাজ্যগুলির উপরে।
এই নির্ভরতা কাটাতেই এগিয়ে আসছে মহকুমা উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি কালনা ১-এ এক হাজার পেঁয়াজ চাষিকে নিয়ে একটি সংস্থা তৈরির তোড়জোড় চলছে। ‘ইন্টার স্টেট এক্সপোজার ভিসিট’ নামে একটি প্রকল্পে সংস্থার ৩০ জন সদস্যকে বাছা হয়েছে ।
আগামী ২৮ জুলাই কালনা থেকে ট্রেনে চাষিরা রওনা দিচ্ছেন নাসিকে। সেখানে কালনার চাষিদের জন্য পেঁয়াজ চাষ ও পাইকারি বাজারে রফতানি দেখানো, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
এ রাজ্যের চাষিদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, সংরক্ষণ কেন্দ্রের অভাবে তাঁরা পেঁয়াজ বেশি দিন রাখতে পারেন না। অথচ নাসিকের চাষিরা এ কাজে দক্ষ। তাই কালনার চাষিরা তা-ও দেখবেন, জানান উদ্যানপালন দফতরের মহকুমা আধিকারিক পলাশ সাঁতরা। কী ভাবে বিভিন্ন পেঁয়াজের বীজ তৈরি হয়, তা কালনার চাষিদের দেখাবে ‘ন্যাশনাল হর্টিকালচার রিসার্চ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’।
পলাশবাবু বলেন, ‘‘নাসিকে চাষিদের প্রায় এক সপ্তাহ রাখা হবে গবেষণা কেন্দ্রের মধ্যেই। যাতে সকাল হওয়ার পরে থেকেই তাঁরা পুরো বিষয়টা দেখতে পারেন। আশা করি, আমাদের এলাকার চাষিরা এতে উপকৃত হবেন।’’ নাসিক যাচ্ছেন নান্দাইয়ের চাষি বাপি শীল। তাঁর কথায়, ‘‘ওখানে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছি। ওখানের অভিজ্ঞতা এলাকার অন্যদের জানাব।’’