খোলামুখ খনির মাটি ফুঁড়ে ধোঁয়া, আতঙ্ক তপসিতে

বেশ কিছু দিন ধরেই নানা জায়গা থেকে অল্পস্বল্প ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। রবিবার ভোর থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোতে শুরু করায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে ইসিএলের কুনস্তরিয়া এরিয়ায় নর্থ সিহারশোলে খোলামুখ খনির তপসিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৬
Share:

রবিবার দিনভর গলগল করে বেরোল ধোঁয়া। নিজস্ব চিত্র।

বেশ কিছু দিন ধরেই নানা জায়গা থেকে অল্পস্বল্প ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। রবিবার ভোর থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোতে শুরু করায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে ইসিএলের কুনস্তরিয়া এরিয়ায় নর্থ সিহারশোলে খোলামুখ খনির তপসিতে। এর জেরে তপসি গ্রামের একাংশ, সার্থকপুর ও ভূতবাংলো-সহ আশপাশের কয়েকটি এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন বলে অভিযোগ। ইসিএল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, আতঙ্কের কারণ নেই।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দার জানান, প্রায় মাসখানেক ধরে নর্থ সিহারশোল প্যাচে গোটা দশেক জায়গায় ভূগর্ভ ফুঁড়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। এ দিন হঠাৎ তপসি গ্রামের দিকে বেশি ধোঁয়া বেরোতে শুরু করে। তার সঙ্গে কয়লার গুঁড়ো বাতাসে মেশায় বাড়ির আসবাবপত্র, খাবারে মিশে সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দা তথা শিক্ষক বিকাশ মণ্ডলের কথায়, ‘‘শ্বাসকষ্ট, চোখজ্বালা-সহ নানা শারীরিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’’ তাঁদের আশঙ্কা, অদূরে কয়লায় আগুন লেগে মাটির নীচে কয়লাস্তরে আগুন ছড়িয়ে পড়লে বসতির ক্ষতি হতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দা বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আমরা খনি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, দ্রুত ভূগর্ভে আগুন নেভানোর কাজ করতে হবে। না হলে আমরা গ্রামবাসীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।”

শিল্পাঞ্চলের সিটু নেতা মনোজ দত্ত থেকে স্থানীয় তৃণমূল নেতা মনোজয় চট্টোপাধ্যায়, সকলেরই অভিযোগ, কয়লা খননের আগে কর্তৃপক্ষ ভৌগোলিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ না করেই মাটি কাজ শুরু করেছে। ফলে, ভূগর্ভে চাপা পড়ে থাকা আগুন মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে। কিন্তু তা নেভানোর ব্যবস্থা না করে সংস্থা অদূরেই খনন চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে, বড় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে বলে তাঁদের দাবি।

Advertisement

ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, নর্থ সিহারশোলে আগে ভূগর্ভস্থ খনি ছিল। সেখানে চারপাশে অবৈধ কুয়ো খাদ চালাচ্ছিল দুষ্কৃতীরা। ২০১০-১১ নাগাদ সেই অবৈধ সুড়ঙ্গে বাইরের জল ঢুকে তা বৈধ খনিতে পৌঁছে যায়। ভূগর্ভস্থ খনি বন্ধ করে দিতে হয়। ২০১২ নাগাদ ওই খনির উপরে খোলামুখ খনি চালু করা হয়। অভিযোগ, বছর দুয়েক ধরে সেই খোলামুখ খনিতে রাতে চোররা কয়লা কাটতে নামছে। ইসিএলের এক আধিকারিকের অভিযোগ, “পুলিশ-প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া চুরি বন্ধ প্রায় অসম্ভব। সেই সুযোগই নিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। তার জেরে আগুন লেগে কোটি-কোটি টাকার কয়লা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।’’ পুলিশ অবশ্য জানায়, কয়লা চুরির অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “অবৈধ খননের জেরে ভূগর্ভস্থ খনি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকায় মজুত কয়লা কাটার জন্য প্যাচ চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। অবৈধ খননে তৈরি সুড়ঙ্গে জমে থাকা কয়লা অক্সিজেনের স্পর্শে আসায় আগুন ধরে যাচ্ছে। সেই আগুন মাটি ফুঁড়ে বেরোচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ইসিএল বিধি মেনেই কাজ করছে। এলাকাবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন