কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
Fees

প্রায় হাজার টাকা ‘ফি’ বৃদ্ধি, ক্ষোভ

ফি জমা দেবার শেষ দিন ছিল ২৬ অগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত থাকলেও প্রায় ৪৮৭ জন পড়ুয়া ফি জমা করেননি বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২০ ০২:৩৯
Share:

কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ পড়ুয়া-অভিভাবকরা।

৩৭৫ থেকে এক লাফে ১,৩৫০ টাকা সেশন ‘ফি’ করা হয়েছে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ সিমেস্টারের পড়ুয়াদের বড় অংশ। জমা দেওয়া হয়েছে প্রতিবাদপত্রও। এ দিকে, ফি জমা দেবার শেষ দিন ছিল ২৬ অগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত থাকলেও প্রায় ৪৮৭ জন পড়ুয়া ফি জমা করেননি বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

ফি বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি নিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যের কোনও বিশ্ববিদ্যালয় ফি বাড়াবে না। কেউ নিজেদের সিদ্ধান্তে তা করলে শিক্ষা দফতর তা অনুমোদন করবে না। এখানে কী হয়েছে, খোঁজ নিচ্ছি।’’

ফি প্রত্যাহারের দাবিতে ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন হচ্ছে। এমনকি, ভাঙচুরেরও অভিযোগ উঠেছিল। সমস্যা মেটাতে ‘ফিজ রিভিউ কমিটি’ গঠন, কমিটি ফি পর্যালোচনা করে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতরে জমা করার মতো ঘটনা ঘটে। দিন দশেক আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফের ২৬ অগস্টের মধ্যে ফি জমা করার বিজ্ঞপ্তি দেন। পড়ুয়াদের অভিযোগ, পুরনো বর্ধিত ফি চাওয়া হয়েছে। ইংরেজি বিভাগের পড়ুয়া অর্পিতা রায়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়া দেবরাজ মণ্ডল প্রমুখ বলেন, ‘‘এই অতিমারির সময়ে অনেকেই আর্থিক কষ্টে রয়েছেন। ফলে, এই ফি দেওয়া সম্ভব নয়।’’

Advertisement

পড়ুয়াদের প্রশ্ন, এই আবহে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফি কমানো বা ভর্তি ছাড় নিয়ে একাধিক নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। তার পরেও, কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফি বৃদ্ধি? যদিও, উপাচার্য সাধন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘চলতি শিক্ষাবর্ষে আমরা ফি বাড়াইনি। এই ফি গত শিক্ষাবর্ষে ধার্য করা হয়েছিল। অনেক পড়ুয়াই ফি জমা করেছেন। হঠাৎ করোনা সংক্রমণের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কিছু পড়ুয়া ফি জমা করতে পারেননি।’’ উপাচার্যের দাবি, ফিজ রিভিউ কমিটি রিপোর্টে ফি পুনর্বিবেচনা সংক্রান্ত কোনও প্রস্তাব মেলেনি।

পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনলাইন-কাজকর্ম, পড়ুয়াদের আধুনিক পরিষেবা দিতে বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়। সাধনবাবু বলেন, ‘‘এর পরেও এই দুই সিমেস্টারের প্রায় ১৮০ জন দুঃস্থ পড়ুয়াকে ফি জমা করতে হাজার টাকা করে অর্থ সাহায্য করা হয়েছে। তার পরেও সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়া রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত আবেদন করলে, অবশ্যই পরিস্থিতি বিবেচনা করা হবে।’’

তবে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ। পাশাপাশি, ফিজ রিভিউ কমিটির রিপোর্টে ফি পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়নি বলে যে দাবি করা হয়েছে, তারও বিরোধিতা করছেন কেউ কেউ। ফিজ রিভিউ কমিটির অন্যতম সদস্য তথা ইংরেজি বিভাগের প্রধান শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘‘আমরা ফি কমানোর পক্ষে রায় দিয়েছিলাম। সেটা এখন বিবেচনা করা হোক।’’ কমিটির সভাপতি তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতরের সদস্য সুশান্ত মিত্র বলেন, ‘‘বিষয়টি আলোচনার পর্যায়ে আছে। তাই মন্তব্য করছি না। তবে অতিমারির আবহে ঠিক সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে, আশা রাখি।’’ রেজিস্ট্রার শান্তনু ঘোষ জানান, আলোচনা চলছে, দেখা যাক কী হয়। পড়ুয়াদের সমর্থন করেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলিও। ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তথা টিএমসিপি নেতা আদর্শ শর্মা বলেন, ‘‘আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দিয়েছি।’’ পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলনে নামার কথা জানিয়েছেন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের জেলা নেতা শুভ গঙ্গোপাধ্যায়, এসএফআইয়ের জেলা আহ্বায়ক রাহুল মণ্ডলেরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন