নিষেধ: নিষেধ লেখার পাশেই সিনেমার পোস্টার। —নিজস্ব চিত্র।
ঐতিহ্যবাহী স্কুল পরিষ্কার রাখা নিয়ে বরাবরই সচেষ্ট ছাত্ররা। নিজেরাই স্কুলের সীমানা দেওয়ালে বিজ্ঞাপন, পোস্টার সাঁটানোয় নিষেধের কথা লিখে রেখেছে। তারপরেও ওই দেওয়ালে পড়েছে বাংলা, হিন্দি সিনেমার পোস্টার। বুধবার ওই পোস্টার দেখেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলাশাসক ও জেলা পরিষদের কর্তার দ্বারস্থ হয়েছে বর্ধমান শহরের দুশো বছর পুরনো রাজ কলেজিয়েট স্কুলের ওই পড়ুয়ারা।
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জয়ন্ত নন্দী, সরফরাজ খানদের কথায়, “স্কুলের দু’শো বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গত এক বছর ধরে আমরা নানা কর্মসূচি নিয়েছি। সেখানে বিজ্ঞাপন নিষেধ লেখা থাকার পরে সিনেমার পোস্টার মারার কোনও মানে হয়! সে জন্যই আমরা জেলার দুই সর্বোচ্চ কর্তার কাছে চিঠি দিয়েছি।” তাদের আরও দাবি, ‘‘আমাদের স্কুলকে রক্ষা করা ও স্বচ্ছ্ব রাখার দায় আমাদের।’’ ওই পড়ুয়াদের অভিযোগ, দেওয়ালে সাঁটানো ‘স্টিক নো বিল’ লেখা কাগজ ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের সামনে গাড়ি রাখা বা হর্ন বাজানোতেও ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি করেছে পড়ুয়ারা।
বর্ধমানের রাজা তেজচন্দের উদ্যোগে এই স্কুল তৈরি। প্রথমে রাজবাড়িতে, পরে রানির বাড়িতে স্কুল চলে। সেখান থেকে বর্তমান জায়গা, নতনগঞ্জে স্কুলটি উঠে আসে ১৮৮২-৮৩ সালে। বর্ধমান রাজ পরিবারের গবেষক নীরদবরণ সরকার বলেন, “কলকাতায় হিন্দু স্কুল তৈরির সময় মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন বর্ধমান রাজ পরিবার। তারপরে বর্ধমানেও স্কুল তৈরিতে উদ্যোগী হন তাঁরা।” মহতাব চন্দের আমলে ১৬ হাজার বর্গফুট জায়গায় ২৫ ফুট উচ্চতার ভবনটি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল ৮০ হাজার টাকা। পরে ২০০৭ সালের ২৮ মে ভবনটিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। এই স্কুলের পড়ুয়া ছিলেন অভিনেতা কমল মিত্র, বিজ্ঞানী যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি, বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়েরা।
পড়ুয়া রাহুলদেব মুদি, শাকিল আখতারদের দাবি, সংস্কারের অভাবে বেশির ভাগ ঘর ভেঙে পড়ছে। ছাদ চুইয়ে জল পড়ে। এ অবস্থায় স্কুল যতটা সম্ভব পরিষ্কার করে রাখার চেষ্টা করা হয়। তাহলে আমাদের, শিক্ষকদের তো বটেই পুরনো ছাত্রদেও ভাল লাগে।
জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব ও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ হাজরা চৌধুরী জানান, সিনেমা হলগুলিকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হবে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রবীর মণ্ডল বলেন, “পড়ুয়াদের জন্য ঐতিহ্যবাহী স্কুলকে রক্ষা করতে অনেকেই এগিয়ে আসবেন আশা করি।”